শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান প্রেরণা

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৭ মার্চ, ২০২২
  • ১৩৫ বার পঠিত

ইমরান খান

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ এর নির্বাচনে প্রদত্ত জনগণের রায় মেনে নেয়ার আহ্বান জানান। ঐতিহাসিক এ জনসভায় তিনি বাঙালী জাতিকে নির্দেশ দেন ”আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় – তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে । এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বাঙালির বুকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র বোনা হয়ে যায় সেই দিনই। সেদিন থেকে আর বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। আর সে কারণেই ২৫ মার্চ রাতে ”অপারেশন সার্চলাইটের” নামে বাঙালি নিধন শুরু হলেও রুখে দাঁড়াতে সময় নেয়নি বীর বাঙালি। ধ্বংসস্তুপ থেকে জেগে উঠে মুক্তির যুদ্ধে শামিল হয় সমগ্র জাতি।
মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান প্রেরণা ছিল বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ। এ ভাষণ সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বজ্রতুল্য ঘোষণা। ইউনেসকোর স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে বিশ্ব ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। এটি আমাদের জন্য একই সঙ্গে গৌরব ও আনন্দের। ব্রিটিশ ঐতিহাসিক জ্যাকব এফ ফিল্ড বিশ্বের সেরা বক্তৃতাগুলো নিয়ে উই শ্যাল ফাইট অন দ্য বিচেস: দ্য স্পিচেস দ্যাট ইন্সপায়ার হিস্ট্রি নামে যে বই করেছেন, তাতেও সাতই মার্চের ভাষণকে বিশ্বের অন্যতম অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তৃতা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণ কেবল ঐতিহাসিক নিদর্শন নয়, গোটা জাতির প্রেরণা। যুগে যুগে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীকে আন্দোলিত করার মতো ভাষণ অনেক নেতাই দিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে সেই ভাষণের প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের নজির বিরল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র বাংলাদেশে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন গড়ে ওঠে, ২৫ মার্চের পর যা সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে রূপ নেয়। মাত্র ১৭ মিনিটের ভাষণে সেদিন বঙ্গবন্ধু যেমন আমাদের দীর্ঘ সংগ্রাম ও আন্দোলনের পটভূমি তুলে ধরেছেন, তেমনি দেশবাসীর করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এক কথায় বলা যায়, এটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের রণকৌশল। তাঁর এই ভাষণ কেবল মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে তাই নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও দিশা হয়ে থাকবে। এই ভাষণ নিয়েই লিখিত হয়েছে অবিস্মরণীয় কবিতা, গল্প ও নিবন্ধ। ভবিষ্যতেও হবে। আর এভাবেই একটি ভাষণ হয়ে উঠেছে সমগ্র জাতির কণ্ঠস্বর। ভাষণটি বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানেরও অংশ। ইউনেসকোর স্বীকৃতি সমগ্র জাতির গৌরব।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর অমোঘ উচ্চারণ ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। একাত্তরে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। কিন্তু মুক্তির সংগ্রাম আজও শেষ হয়নি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা এসেছে রক্তস্নাত পথ ধরে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে জয়ী দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারা রাতের আঁধারে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালিদের ওপর। শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে ২৬ মার্চের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ডাক দেন সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের। মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষের জীবনদানের বিনিময়ে স্বাধীনতা নিষ্কণ্টক হয়।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সাহসী এবং দুরদর্শী নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ গঠন, ১৯৪৯ এ আওয়ামী লীগ গঠন, ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ এর নির্বাচনে মুসলিম লীগকে পরাজিত করে রাষ্ট্র পরিচালনা, ১৯৫৬ তে পুনরায় নির্বাচনে জয়লাভ, ১৯৫৮ তে আইয়ুব খানের মার্শাল ’ল’ এর বিরোধিতা, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশকে অরক্ষিত রাখায় প্রতিবাদ, ১৯৬৬ এ বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা ঘোষনা এবং আন্দোলন, ১৯৬৮ এর এর আগরতলা মামলায় বঙ্গবন্ধুর গ্রেফতার, ১৯৬৯ এর গণ আন্দোলন এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়লাভের রক্তস্নাত এবং সাহসী পথ ধরেই দীর্ঘ ২১ বছরের ’স্বাধীনতা সংগ্রামের’ মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে তৈরী করেছিলেন ’মুক্তিযুদ্ধের’ জন্য। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণের ভেতর দিয়েই জাতি পেয়ে যায় সুনির্দ্দিষ্ট দিকনির্দেশনা। সেদিনই স্থির হয়ে যায় বাঙালির ভাগ্য। পাকিস্তানি শোষণের যাঁতাকল থেকে মুক্তির পথ যেন খুঁজে পায় বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতিকে নির্দেশ দেন ”প্রত্যেক ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো, যার যা কিছু আছে তাই নিয়েই শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে”। যার ফলে আমরা দেখি একাত্তরে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরই যেন হয়ে উঠেছিল একেকটি দূর্গে। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে গুটি কয়েক রাজাকার, আলবদর, জামাতি ছাড়া কাউকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল বাঙালি। স্বীকার করতে হয়েছিল অপরিসীম ত্যাগ-তিতীক্ষা।

লেখক: সিনিয়র সহসভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী মোটর চালক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com