‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুছে যাক জরা, অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’ কবিগুরু এভাবেই পুরনো গ্লানি মুছে দিয়ে নতুন বছরে নতুন উদ্দীপ্ততায় এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। সব না পাওয়া, ব্যর্থতা, ব্যথা-বেদনা ও হাহাকারকে বিদায় জানিয়ে সাফল্য ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। বিদায়ী বছরের সব ব্যর্থতা ভুলে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার দীপ্ত প্রত্যয়ের প্রথম দিন আজ বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন। আজ পয়লা বৈশাখ। বঙ্গাব্দ ১৪৩০-এর প্রথম দিন।
পাওয়া-না পাওয়ার জীবনের হালখাতার সব হিসাব চুকে দিয়ে, ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আজ বাংলা নববর্ষে নতুনভাবে এগিয়ে যাবে বাঙালি। ভ্রাতৃত্বের সেতুবন্ধে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা আয়োজনে পয়লা বৈশাখকে স্বাগত জানাবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায়।
বাংলাদেশে নববর্ষ পালিত হচ্ছে শত শত বছর ধরে। তবে পয়লা বৈশাখ কেন্দ্র করে নববর্ষের সূচনা মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে। ফসলি সন কালক্রমে রূপান্তরিত হয়েছে বাংলা সন হিসেবে। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলে গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডার দিনপঞ্জি হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে চালু হলেও গ্রামীণ সমাজে বাংলা বর্ষপঞ্জির গুরুত্ব এতটুকু কমেনি। কৃষকসমাজ আজও বাংলা সন সামনে রেখে তাদের ফসলি কার্যক্রম চালায়। দেশের সবচেয়ে বড় উৎপাদনব্যবস্থার সঙ্গে বিজড়িত বাংলা সনের সম্পর্ক। বাংলা নববর্ষের অন্যতম অনুষঙ্গ বৈশাখী মেলা। এ মেলা জাতি-ধর্মনির্বিশেষে সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। বাংলাদেশ ভূখন্ডে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার পাকিস্তানিদের দখলভুক্ত এলাকায় পয়লা বৈশাখ পালনের কোনো সুযোগ ছিল না। তবে সে বছরও পশ্চিম বাংলা, ত্রিপুরাসহ দুনিয়ার অন্যত্র পয়লা বৈশাখ পালিত হয়েছে ঘটা করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণাধীন মুক্ত এলাকা ও ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলোয় পয়লা বৈশাখ পালিত হয়েছে দেশকে শত্রুমুক্ত করার প্রত্যয়ে।
বাঙালির নববর্ষ আসে কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ার মাতম তুলে। জরাজীর্ণ যা কিছু উড়িয়ে দিয়ে নববর্ষে নতুনের অভিষেক হয়। নববর্ষে বাঙালি অতীতের দুঃখ-বঞ্চনা-ব্যর্থতা ভুলে সামনে এগোনোর শপথ নেয়। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ- সবখানেই রয়েছে পয়লা বৈশাখের হার না মানা প্রত্যয়। নববর্ষ বাঙালির সর্বজনীন সংস্কৃতির বাহন বিবেচিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিবারের মতো এবারের নববর্ষে সবার প্রত্যাশা থাকবে একটি সুখী-সমৃদ্ধিশালী অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার। সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নববর্ষের স্বাজাত্যবোধ অনুপ্রেরণা জোগাবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।
বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ সবার জন্য হোক স্বস্তি ও শান্তির।
লেখক: কো-চেয়ারম্যান, জাতীয় পার্টি