সিটিজেন প্রতিবেদকঃ‘খাদ্য হোক নিরাপদ, সুস্থ থাকুক জনগণ’ প্রতিপাদ্যে আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সারাদেশে পালিত হচ্ছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। প্রতিবছরের ২ ফেব্রুয়ারি দিবসটি উপলক্ষে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দেশব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
২০১৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয় নিরাপদ খাদ্য দিবস। ওই বছর সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিরাপদ খাদ্যের বিষয়ে সচেতন করে তোলার অংশ হিসেবে ২ ফেব্রুয়ারিকে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ২৬ শতাংশই মানহীন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরীক্ষাগারে নিয়মিত নমুন পরীক্ষার ফলাফলে এ তথ্য জানা গেছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ) দেশের বিভিন্ন পরীক্ষাগারে নিয়মিতভাবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের মান পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে।
গত নভেম্বরে ৩০টি খাদ্যপণ্যের ১৫২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়।এর মধ্যে ২৯টি ছিল প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য। ১১১টিতে উপাদানের উপস্থিতি সঠিক মাত্রায় পাওয়া গেছে। কিন্তু ৪১টি নমুনায় সঠিক মাত্রায় উপাদান ছিল না। আর প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের মধ্যে ৩৯টি ছিল মানহীন।
বিএফএসএ সাতটি নমুনা সংগ্রহের মাধ্যমে মুড়ির মান পরীক্ষা করে। ল্যাবরেটরির পরীক্ষায় প্রতিটি মুড়িতেই মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড ও ইউরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। একইভাবে ৫৭টি নমুনার মাধ্যমে ফ্রুট ড্রিংসের মান পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে দুটি নমুনায় বেটা ক্যারোটিন, টারট্রাজাইনসহ অনান্য উপাদান সঠিক মাত্রায় ছিল না।
বিএফএসএর পরীক্ষাগারে যেসব মানহীন পণ্য পাওয়া গেছে, এর মধ্যে রয়েছে পাউরুটি, ধনিয়ার গুঁড়া, লবণ, কোমল পানীয়, সরিষার তেল, মুড়ি, আচার, ঘি, সস, মধু, ফ্লেভারড ড্রিংস, কুল লাচ্ছি, এডিবল জেল।
এসব পণ্যে বিভিন্ন পুষ্টি ও সাধারণ উপাদান যে মাত্রায় থাকার কথা, সেগুলোর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। অনেক পণ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও স্বাস্থ্যঝুঁকির উপাদান পাওয়া গেছে।
জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করা। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সর্বসাধারণকে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুদ, সরবরাহ, বিপণন ও বিক্রয় সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম বিষয়ে সর্বস্তরে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে এই দিবস পালন করে থাকে।
বিএফএসএর ল্যাবরেটরির গবেষণায় খাদ্য নমুনার পরীক্ষা কার্যক্রমে দেখা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের ৪৫০টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৬০টি নমুনায় সঠিক মান পাওয়া গেছে। বাকি ৯০টি নমুনায় সঠিক মান পাওয়া যায়নি।
অনিরাপদ খাবার গ্রহণের কারণে দেহে ক্যান্সার, কিডনি রোগ ও বিকলাঙ্গতাসহ দুই শতাধিক রোগের সৃষ্টি হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, প্রতি ১০ জনে একজন অনিরাপদ খাবার খেয়ে অসুস্থ হচ্ছে।
বছরে প্রায় চার লাখ ২০ হাজার মানুষ অনিরাপদ খাদ্য খেয়ে মারা যাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় দেশের খাদ্য নিরাপদ করতে প্রক্রিয়াজাত প্রতিষ্ঠানসহ খাদ্য উৎপাদনের সব পর্যায়ে তদারকি বাড়ানো এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিএফএসএর চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, ‘দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আমরা দেশব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। প্রতিটি জেলা থেকে খাদ্য মান পরীক্ষা ও ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মানহীন পণ্যের ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে মান উন্নয়নের কিছুটা সময় দিয়ে থাকি। কিন্তু ভেজাল পণ্য পেলে আইন অনুসারে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।