হাফসা উত্তরা :
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)কে দুই বিভাগে ভাগ করার কারণে রাজস্ব বোর্ড ও কাস্টমস ক্যাডারদের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
গত কয়েক দিন যাবত এনবিআর কর্মকর্তারা কলম বিরতি করে আসছে। এ ঘটনায় সংকটে পড়েছে এখানকার খেটে খাওয়া কয়েক হাজার মানুষ। কলম বিরতির ফলে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার পণ্য,লোকসান হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
গত ১২ইমে রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে দুইভাবে বিভক্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ করা হয়েছে। এ নিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে সেখানে কর ও কাস্টমস ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। তারা বলছেন এভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরকে দুই বিভাগে ভাগ করে এনবিআর কর্মকর্তাদের নিয়ন্ত্রণ করার পায়তারা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে কাস্টমস হাউজ,ডিসিএএ ভবন,সিএন্ডএফ মাঠ ও আমদানি-রপ্তানি কমপ্লেক্সে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, এখানকার কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে বসে আছে। গত কয়েক দিন যাবত কাজ নেই তাদের। অনাহারে অর্ধাহারে তাদের দিন কাটছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ কাস্টমস ক্লিয়ারিং এন্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন এর কর্মবিরতির ফলে তাদের মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
স্টেক হোল্ডারগণ অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন
যথা সময়ে পণ্য ডেলিভারি না হওয়া বন্দরের পণ্যজোট সৃষ্টি হচ্ছে। রপ্তানিমুখী শিল্পের কাঁচামাল ও সরবরাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণে রপ্তানি মুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি বানিজ্য কার্যত অচল হয়ে পড়াতে রাজস্ব ও বৈদিক মুদ্রা আহরণ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা শ্রমিকরা বলেন,
আমরা যারা সাধারণ মানুষ আছি এই কর্মবিরতির ফলে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কাজ করতে না পারলে টাকা পাই না, পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।
তারা বলছেন,প্রায় ১০ দিন ধরে কাজ বন্ধ। গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি গুলো আরো বেশি ক্ষতি হচ্ছে, সামনে ঈদ, ঈদ উপলক্ষে সবাই কাজ করবে।
একজন সিএন্ডএফ এজেন্টের কর্মকর্তা বলেন, গার্মেন্টস এর মাল নামিয়ে গার্মেন্টসে দিয়ে আসি, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি আমাদেরকে চাপ দিচ্ছে, গার্মেন্টসের কাঁচামাল গুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে বৃষ্টিতে মালামাল নষ্ট হচ্ছে। গোডাউনে মাল ভরপুর কিন্তু আমরা মাল গুলো নিতে পারছি না, কলম বিরতির কারণে। এ সময় একজন ড্রাইভার বলে,আমি গাড়ি চালাই, গার্মেন্টসের মাল গার্মেন্টসে পৌঁছে দিয়ে আসি। সমস্যাটা সমাধান হলে আমাদের জন্য খুবই ভালো হয়। কয়েকজন শ্রমিক বলেন,এখানে আমরা প্রায় ১০ হাজার মানুষ বলতে পারেন দশ হাজার পরিবার এখানে কাজ করে খাই। অপর এক ব্যাক্তি বলেন, আমরা গার্মেন্টসের মাল ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য আসছি, অনেক গুলো কাগজ আমাদের হাতে দেখতে পাচ্ছেন, আমরা টেক্স বুঝিয়ে দিয়ে কাগজ নিয়ে যাবো, এখন দেখা যাচ্ছে এনবিআর ও সরকার পক্ষে লোকদের সাথে একটা ঝামেলা চলছে। যে কারণে কলম বিরতি চলছে, গার্মেন্টসের মালগুলো পৌছাতে না পারার কারণে অনেক কাজে বন্ধ হয়ে আছে, এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের ও ক্ষতি হচ্ছে। অন্যান্য আরো কয়েকজন ভুক্তভূগি বলেন,আমরা যারা এসব কাজের সাথে জড়িত আছি তাদের সকলেরই ক্ষতি হচ্ছে। যারা দিনমজুর-দিন আনে দিন খায় তাদের অনেক বেশি কষ্ট হচ্ছে, কারণ তারা একদিন কাজ না করতে পারলে খাবারের টাকাটা পর্যন্ত জোগাতে পারে না।
আমরা চাই এই সমস্যা দ্রুত সমাধান হোক। তারা আরো বলেন, এনবিআর ও সরকার পক্ষ যে আসুক আমরা নিয়মিত ট্যাক্স দিয়ে যাবো। আমরা এতো সমস্যা চাচ্ছি না সমাধান চাচ্ছি, প্রত্যেক ঈদের যদি কোন না কোন ঝামেলা হয় কখনো সার্ভারে সমস্যা কখনো আন্দোলন তাহলে আমাদের তো পথে বসতে হবে। গার্মেন্টসের মালামাল গুলো আটকে থাকতে থাকতে দেখা যাবে অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে ঈদ গার্মেন্স কর্মীরা চাপ দিলে ফেক্টরী বন্ধ হয়ে যাবে।
সিএনএফএর সভাপতি বলেন,কাস্টমস কাজ বন্ধ রেখেছে তারা কাজ শুরু করলে আমরাও কাজ করবো। তিনি আরো বলেন এনবিআর দুইটা ভাগে বিভক্ত হয়েছে, একটা রাজস্ব বৃদ্ধি আরেকটা রাজস্ব আহরণ। তাদের আন্দোলনের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে।
আরেক ব্যক্তি বলেন, রাষ্ট্রের অংশ হয়ে যদি কাস্টমস কর্মবিরতি দেয় তাহলে সিএনএফ এর এখানে কিছুই করার নাই, আমাদের ও কিছু করার নাই, কাজ বন্ধ করে বসে থাকা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নাই।
এসময় দেখা যায়, হযরত শাহ জালাল আমদানী কার্গো কমপ্লেক্স-এর সকল গেইট বন্ধ রয়েছে।
কেউ কমপ্লেক্সের বারান্দায় বসে লুডু খেলে, আবার কেউ কেউ ডিসিএএ আশপাশের বটগাছের নিচে খোশগল্প করে অলস সময় পার করছে।
তবে অনেকেরই চোখে মুখে দেখা গেছে দুশ্চিন্তার ছাপ। বলছেন আর কতো দিন কর্মহীন থাকতে হবে।
ডিসিএএ ভবনের সামনের মাঠে সারি সারি ভাবে
রয়েছে শতাধিক কাভার্ড ভ্যান ও পিক-আপ ভেন। গাড়ীর ড্রাইভাররা বলছে সামনে ঈদ, টাকা পয়সা দরকার, সংকট নিরসন খুবই জরুরি।