শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩২ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্যাসেঞ্জার সার্ভিস ও ফ্যাসিলিটেশন কোর্স অনুষ্ঠিত জনগণ ফ্যাসিবাদ মুক্ত নতুন বাংলাদেশ দেখতে চায়-ড. রেজাউল করিম। দলগুলো ঐক্যবদ্ধ না হলে জাতি মহাবিপদের সম্মুখীন হবে: প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় নির্বাচনের দিনেই গণভোট: প্রধান উপদেষ্টা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা ১৭ নভেম্বর শিশুদের রচনা, প্রযুক্তি, খেলাধুলা ও উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতায় আনতে হবে : প্রধান উপদেষ্টা দয়া করে পরিস্থিতি ঘোলাটে করবেন না: তারেক রহমান কাল দুপুরে জাতির ‍উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, যা জাতির জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে উঠবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস হাইকোর্টের স্থায়ী ২১ বিচারপতি শপথ নিলেন

‘সতীত্ব’ প্রমাণে কৃত্রিম রক্তের পিল অনলাইনে, নিন্দার ঝড়

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯
  • ৩২৪ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: না, কোনও কবিতার পঙ্ক্তি নয়। বরং নব্বই দশকের নারী আন্দোলন যে কয়েকটা প্রতিবাদী বিষয়ের ওপর দাঁড়িয়ে তার ভিত তৈরি করে নিচ্ছিল, এই অন্যায্য দাবি তারই একটি। ২০১৯ সালে এসে সেই কুমারীত্বের প্রমাণই এবার প্যাকেটবন্দি। নাম তার ‘আই ভার্জিন পিল।’ এক ক্লিকেই মিলছে অ্যামাজনের ওয়েবসাইটে। সঙ্গে রয়েছে অনেক ‘আশ্বাসবাণী।’ কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। প্রয়োজন পড়ে না কোনও কাটাছেঁড়ার। অজ্ঞান করারও প্রয়োজন নেই। স্রেফ এক পিলেই শরীরে জমে যাবে পরিমাণ মতো থকথকে ‘নকল’ রক্ত। প্রথম সঙ্গমের পরই যা সতীচ্ছেদ ভেদ করে বেরিয়ে আসবে ‘মিথ্যা’ কুমারীত্বের ‘প্রয়োজনীয়’ প্রমাণস্বরূপ! আবার তাতে চলছে অফারও!

অ্যামাজনের এই পণ্য বিক্রির খবর জানতে পেরেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন নানা ক্ষেত্রের বিশিষ্ট মানুষজন। বিরোধিতায় পিছিয়ে নেই আমজনতাও। প্রথম শারীরিক মিলনের রাতে মেয়েটিকে রক্তাক্ত হতেই হবে; এ সংস্কার শুধুই তৃতীয় বিশ্বের নয়, বরং অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশই এই ‘ট্যাবু’ বহন করে এসেছে যুগের পর যুগ। কখনও সরাসরি, কখনও ঘুরপথে।

বিভিন্ন সময়ে নানা ধর্মীয় ভাবাবেগ ও কুসংস্কারকে শিখণ্ডী করে এমন প্রথাকে ‘নিয়ম’ বলে দেগে দিয়েছে সমাজের একাংশ। প্রত্যন্ত অঞ্চলে তো বটেই, এমনকি শহুরে জনজাতিরও কারও কারও মনের অন্দরে ঘাপটি মেরেছিল এমন বর্বর প্রমাণ দেয়ার খেলা। সেই খেলা যে অতীতে হারিয়ে যায়নি, তা-ই কি প্রমাণ করছে অ্যামাজনের এমন পণ্যের কেনাবেচা?

পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিক তিলোত্তমা মজুমদার বলছেন, ‘মেয়েদের ছোট করতে সমাজের চাপিয়ে দেয়া, লালন করা নানা খেলার প্রসঙ্গ তো বাদই দিলাম, এ তো রীতিমতো মিথ্যাচার! প্রতারণা!’ তার মতে, ‘অবিশ্বাস ও মিথ্যাচার দিয়ে সম্পর্ক শুরুর হদিশই তো দিচ্ছে এই পিল! কুমারীত্বের প্রয়োজন আছে কি-না তা নিয়ে বলার পাশাপাশি এই প্রতারণার দিকটিই বা উড়িয়ে দিই কী করে! মেয়েটি বিশ্বাস করছে, কুমারী না হলে ভালবাসা কমবে! ছেলেটি ভাবছে, কুমারী হয়ে ধরা দেয়াই ভালবাসার প্রাথমিক শর্ত!’

তিলোত্তমার কথায়, ‘এই দুই ধারণার ওপর নির্ভর করেই ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাটি যদি তাদের পিল বাজারে আনে, আর তার ব্যবহারও হু হু করে বাড়ে, তাহলে এই সমাজকে যে তার আন্দোলনকে ফের কেঁচে গণ্ডুষ করতে হবে তা বেশ বোঝা যায়। দু’জন ব্যক্তিমানুষের একজন অন্যের আস্থা অর্জন করছে এক অন্যায়, আদিম ও অপ্রয়োজনীয় প্রথা দিয়ে, আর অন্যজন সেই বর্বর প্রথা দিয়েই নিক্তিতে মেপে মেয়েটির ‘খুঁতহীন’ শরীরকে গ্রহণ করছে; এই পিল তো সেই আচরণকেই মান্যতা দিচ্ছে!’
তিলোত্তমা বলেন, আর কুমারীত্ব? এই হাইমেন এমন একটা জিনিস যা একটা বয়সের পর যেকোনো কারণে ফেটে যেতে পারে। যৌন সংসর্গে কুমারীত্বের মতো অপ্রয়োজনীয় ও ভিত্তিহীন বিষয়ের সঙ্গে প্রেম, ভালবাসা গুলিয়ে ফেলার মতো ভুল আজও এই সমাজ করে ভাবলে কষ্ট হয়। অসহায়ও লাগে। অবশ্য এমন ভাবনায় সমাজের তথাকথিত শিক্ষিত সমাজের প্রতিনিধিরা থাকলেও আমি অবাক হব না!’

এমন পণ্যের বাজারীকরণের প্রয়োজনীয়তা ও তা কেনাবেচার নেপথ্যে কোন মানসিকতা কাজ করছে, তা নিয়ে কথা বলতে গেলে কোনোভাবেই সমাজে নারীর অধিকার ও তার অবস্থানকে বাদ দিয়ে তা করা যায় না। আর তার হাত ধরেই চলে আসে দীর্ঘ নারী আন্দোলনের দিকটিও। কুমারীত্ব প্রমাণ দাখিল করার দায় পুরাকাল থেকেই বর্তাচ্ছিল মেয়েদের ওপর। তবে হয়তো সেদিন অতীত হয়েছে বলে ভাবতেন নারী আন্দোলনকারী ও সমাজচিন্তক রত্নাবলী রায়। বিষয়টি সামনে আসতে সেই ভাবনার পথে কিছুটা থমকেছেন। এই পণ্যের খবরে তিনি যত না রাগত, তার চেয়েও বেশি বিপন্ন।

রত্নাবলীর কথায়: ‘নারী মানে কি শুধু ভ্যাজাইনা? শুধুই দুই ঊরুর মাঝে জমানো ইজ্জত? একজন মেয়ে যে সমাজের নানা ক্ষেত্রে নানা পারদর্শিতার ছাপ রেখে যান, নানা ঝড় মাথায় রেখে, সংসারে ছাতা হয়ে দাঁড়ান সেটা কিছুই না! এমন সব পণ্য ও সে সব বাজারজাত করার আইডিয়া অবাক করে। আর সতীত্ব? হাইমেন? সকলেই জানেন, বৈজ্ঞানিকভাবেই এই হাইমেন কেবল শারীরিক সম্পর্কে ছিন্ন হয় এমন নয়। নানা কায়িক শ্রমে তা ছিঁড়ে যেতে পারে। কাজেই হাইমেন জোড়া লাগানো বা কৃত্রিম রক্ত উৎপাদন যে চূড়ান্ত নির্বোধের ধারণা থেকে জন্ম নেয়া ভাবনা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।’ আনন্দবাজার।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com