টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪০তম জন্মদিন আজ (১২ ডিসেম্বর)। তার কবরে পুস্পস্তবক অর্পণ করছেন ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ও শিক্ষকসহ কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
প্রতি বছর নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করে বিভিন্ন সংগঠন। তার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মাজারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে মাওলানা ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. আলাউদ্দিন। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, ডিন ও শিক্ষক কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে একে একে মাওলানা ভাসানীর পরিবারবর্গ, ভাসানী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই মহান নেতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
১৮৮০ সালের এ দিনে সিরাজগঞ্জের ধানঘড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ। বাবা হাজী শারাফত আলী ও মা বেগম শারাফত আলীর এক মেয়ে ও তিন ছেলের মধ্যে আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। ছেলে-মেয়েরা বেশ ছোট থাকতে হাজী শারাফত আলী মারা যান। কিছুদিন পর এক মহামারীতে বেগম শারাফত ও দুই ছেলে মারা যায়। বেঁচে থাকেন শুধু শিশু আব্দুল হামিদ খান।
পিতৃ ও মাতৃহীন আব্দুল হামিদ প্রথমে কিছুদিন চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে ছিলেন। ওই সময় ইরাকের এক আলেম ও ধর্ম প্রচারক নাসির উদ্দীন বোগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। হামিদ তার আশ্রয়ে কিছুদিন কাটান। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন আগে (১৮৯৩ সালে) তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহম্মদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসার মোদাররেসের এবং জমিদারের ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর দায়িত্ব নেন। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসীরুদ্দীনের সঙ্গে তিনি আসাম চলে যান। ১৯০৩ সালে তিনি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসালামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭-এ তিনি দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসাম ফিরে আসেন। ১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। তিনি ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করেন। পরে অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে তিনি দশ মাস কারাভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৫ সালে তিনি জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন মহম্মদ চৌধুরীর মেয়ে আলেমা খাতুনকে বিবাহ করেন। ১৯২৬ সালে তিনি তার সহধর্মিণী আলেমা খাতুনকে নিয়ে আসাম গমন করেন এবং সেখানে তিনিই প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলন শুরু করেন। ১৯২৯ সালে আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসান চরে প্রথম তিনি কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নাম হয় ‘ভাসানীর মাওলানা’। এরপর থেকে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দ যুক্ত হয়।
১৯৩১ সালে সন্তোষের কাগমারীতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাওরাখোলায় ও ১৯৩৩ সালে গাইবান্ধায় তিনি কৃষক সম্মেলনের আয়োজন করেন। ১৯৩৭ সালে মওলানা ভাসানী কংগ্রেস ত্যাগ করে যোগ দেন মুসলিম লীগে। মওলানা ভাসানী ১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসহযোগ আন্দোলন সমর্থন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত যান এবং মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। তখন পাকিস্তানি বাহিনী তার সন্তোষের বাড়িটি পুড়িয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে মওলানা ভাসানী একটি বিবৃতি দেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি সমাজ সংস্কারমূলক কর্মেও যুক্ত ছিলেন। তিনি আসামে ৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।