নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা। ইতিমধ্যে ময়দানের ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়তি পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠের ভেতর ও বাইরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। ইজতেমা ময়দানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এবার ইজতেমায় দায়িত্ব পালন করবেন সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্য।
আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইজতেমার আখেরি মোনাজাত হবে রবিবার। এই পর্বে দিল্লির মাওলানা সাদবিরোধীরা অংশ নেবেন। আর পরের সপ্তাহে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার শুরু হওয়া ইজতেমায় অংশ নেবেন সাদপন্থীরা। তাবলিগের আভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এবার বাহ্যত দুই পর্বে ইজতেমা হলেও দুই পক্ষ পৃথক পৃথক ইজতেমা করছে। প্রত্যেক পক্ষই নিজ নিজ ইজতেমাকে মূল বলে দাবি করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ইজতেমা ময়দানের বিশাল সামিয়ানা টাঙ্গানো, রাস্তাঘাট মেরামত ও পয়ঃনিষ্কাশনের কাজ চলছে জোরেশোরে। আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তা ও নাশকতারোধে থাকছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। এরই মধ্যে মাঠের ৯০ ভাগ প্রস্তুতিমূলক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। ১৬০ একর জমির ওপর প্রায় দুই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিশাল চটের প্যান্ডেলের সামিয়ানার নিচে এই ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার ছাত্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ময়দানে প্যান্ডেল তৈরির কাজ করছেন। এছাড়া রাস্তা মেরামত, মাইক টানানো, টয়লেট পরিষ্কার-পরিচ্ছন, ময়দানের আগাছা পরিষ্কারের কাজ করছেন আগত মুসল্লিরা। বিদেশি নিবাস, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা এরই মধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
রাজধানীর লালবাগ এলাকা থেকে আসা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, প্রায় ৭০ জন সাথী নিয়ে ময়দানে কাজ করতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর মেহমানরা ইবাদত বন্দেগি করতে আসবেন। তারা যেন সুন্দরভাবে ইবাদত বন্দেগি করতে পারেন সেই দিক খেয়াল রেখে ময়দানের কাজ করতে আসছি। বিদেশি মেহমানদের কামরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করছি।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা আরেক মুসল্লি জাফর জানান, আল্লাহকে রাজি খুশি করার জন্য ২০ বছর যাবত ইজতেমা মাঠে কাজ করছেন তিনি। গাজীপুরের কালিগঞ্জ থেকে আসা ৫৫ বছরের হাসান আলী বলেন, ‘এই দুনয়িা হচ্ছে ধোঁকার ঘর। আমরা জীবনে অনেক মানুষকে ধোঁকা দিয়েছি। সেই গোনাহ থেকে মাফ পাওয়ার জন্য ইজতমো মাঠে এসেছি।’
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের ব্যবস্থাপনায় আটটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ১৫টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি এবং র্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে ব্লিচিং পাউডার ও মশক নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন ও ধুলোবালি যাতে না ওঠে সেজন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা থাকছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি গ্যালন পানির ব্যবস্থা থাকছে। বাড়তি টয়লেট নির্মাণ ও পাকা টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে মুসল্লিদের কোনো সমস্যা হবে না।’
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগত লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় এখানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকছে পুরো ময়দানজুড়ে। খিত্তায় খিত্তায় নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ইজতেমায় সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে।’
ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন গণমাধ্যমকে জানান, ময়দানের প্রস্তুতিকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শুক্রবারের আগেই কাজ সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।