সাম্প্রতিক সময়ে দেশে তেলের দাম বৃদ্ধির পর রাজধানীসহ পুরো দেশেই গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো হয়। এরপরই কথা উঠে রাজধানী ও এর আশপাশের শহরতলীর বাসে চলমান ওয়েবিল ও চেকার প্রথা নিয়ে। গত ১০ আগস্ট ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক সভায় গণপরিবহন থেকে ওয়েবিল ও চেকার প্রথা বাতিলের কথা জানানো হয়। পাশাপাশি এক স্টপেজ থেকে আরেক স্টপেজ পর্যন্ত বাসের দরজা বন্ধ রাখা এবং রুট পারমিট অনুযায়ী স্টপেজে বাস থামাতে একমতও হন ঢাকার ১২০টি পরিবহন কোম্পানির প্রতিনিধিরা।
কিন্তু বাস মালিকদের সঙ্গে সভার সিদ্ধান্তগুলো আর রাজধানীর কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের সমিতির কার্যালয়ের বাইরে আসতে পারেনি। ভেতরে সভা চলাকালীন মালিক সমিতি ওয়েবিল বাতিলের পক্ষে একমত হলেও সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। নিজেদের লাভের কথা ভেবে যাত্রীদের পকেট কাটার সেই ওয়েবিল এতদিন পরও বহাল তবিয়তে চলছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সরকার ও মালিক সমিতির থেকেও কি পরিবহন কোম্পানিগুলো বেশি শক্তিশালী? নাকি লাভের গুড় খেতে কেউ ছাড় দেয় না! যদিও এ প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেননি ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির কোনো নেতা। বলছেন, মালিকদের ক্ষতির বিষয়টিও দেখতে হচ্ছে। আলোচনা চলছে, যাত্রী ও মালিক কেউই যাতে ক্ষতির মুখে না পড়ে সেভাবেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
রাজধানীর প্রতিটি রুটেই অনেকদিন ধরেই কয়েক কিলোমিটার পরপর ‘চেক পয়েন্ট’ বসিয়ে যাত্রীর হিসাব রাখা হয়। প্রতিটি চেক পয়েন্টে কাজের জন্য কর্মীও রেখেছেন মালিকরা। ‘চেক পয়েন্ট’ অতিক্রম করলে বাসের যাত্রীর সংখ্যা উল্লেখ করে নির্ধারিত একটি শিটে স্বাক্ষর করে দেন সংশ্লিষ্ট কর্মী। এটাকে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ভাষায় বলা হয় ওয়েবিল। পরে যাত্রীসংখ্যা হিসাব করে ওই পয়েন্টগুলো পর্যন্ত নির্ধারিত ভাড়ার অংক গুণ করে বাস মালিক টাকা বুঝে নেন। আর যিনি এ কাজ করেন তাকে চেকার বলা হয়। নামার সময় বাসের সুপারভাইজারের কাছ থেকে চেকার নিয়ে থাকেন ১০ থেকে ২০ টাকা।
গত ৫ আগস্ট রাত ১২টা থেকে ডিজেলসহ চার ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৫২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ডিজেলের দাম সাড়ে ৪২ শতাংশ বাড়ানোর কারণে ওই দিন রাতেই নতুন হারে বাসভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আসে। নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও বিভিন্ন রুটে সর্বনিম্ন দূরত্বের জন্য সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া নেয়ার অভিযোগ আসে। বিশেষ করে ওয়েবিল ও চেকার প্রথার নামে স্বল্প দূরত্বেও অনেক বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাসকর্মীদের বচসার ঘটনা প্রতিনিয়তই ঘটছে।
সাইনবোর্ড এলাকা থেকে সাভারের বাইপাইল পর্যন্ত চলাচল করে লাব্বাইক ট্রান্সপোর্ট। বিভিন্ন পয়েন্টে তাদের চেকার আছে, যারা যাত্রী গুনে ওয়েবিলে লিখে দেন। আর সে হিসেবে মালিকরা চালকের কাছ থেকে টাকা বুঝে নেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজার থেকে আসাদগেট পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন ভাড়া ১০ টাকা। কিন্তু ওই বাসের একটি চেকিং পয়েন্ট খামার বাড়ি। সেখানে চেকার ওয়েবিলে যাত্রী সংখ্যা লিখে দিচ্ছেন। ফলে যাত্রী যেখানেই বাস থেকে নামুক না কেন, তাকে ভাড়া দিতে হচ্ছে গাবতলী পর্যন্ত অর্থাৎ ২৫ টাকা। আর বাসে ভাড়ার চার্ট থাকলেও সেটির কোনো মূল্য নেই সুপারভাইজারের কাছে। এভাবেই নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।