নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: মেয়ে হত্যার বিচার ছয় মাসের মধ্যেই চান ওয়ারীর কন্যাহারা সেই বাবা। আর সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া কোনোভাবেই শান্ত হবেন না তিনি।
দেশ জুড়ে আলোড়ন তোলা এই ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান সন্দেহভাজন হারুন অর রশিদ গ্রেপ্তার হয়েছেন রবিবার। আর তার বিষয়ে জানাতে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে।
সেখানে ছিলেন ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা। আর হারুনকে দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আর সামলাতে পারেননি আবেগ। কেঁদে ফেলেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে সামিয়ার বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার পরীর মতো মেয়েকে যে কষ্ট দিয়ে মেরেছে তারও সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে তার ফাঁসি চাই।’
গত কয়েক বছর ধরে সারাদেশে শিশু ধর্ষণের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম-বিএসএএফ এর পরিসংখ্যান চলছে, চলতি বছরে প্রথম চার মাসে (২৯ এপ্রিল পর্যন্ত) ২৯০টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যথাক্রমে ৫২, ৬০, ৫২টি করে মোট ১৬৪ টি শিশু ধর্ষিত হয়েছে। আর শুধু এপ্রিল মাসেই ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১১৫টি শিশু। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে ৭০টির বেশি শশু ধর্ষিত হয়েছে, যা অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি। বিএসএএফের তথ্য অনুযায়ী গত চার মাসে সর্বনিম্ন আড়াই বছর বয়সের শিশুও ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় অভিভাবকরা। ওয়ারীতে কন্যা হারানো বাবা বলেন, ‘আমি দেশবাসীকে একটি কথা বলতে চাই, যাদের মেয়ে বাচ্চা আছে, তারা আগলে রাখবেন। এক মুহূর্তের জন্য আড়াল হতে দেবেন না। এইসব নরপিশাচদের হাত থেকে খেয়াল রাখবেন।’
গত শুক্রবার রাত ৯টার দিকে ওয়ারীর বনগ্রামের একটি বহুতল ভবনের ৯ তলার খালি ফ্ল্যাটের রান্নাঘরের মেঝে থেকে ওই শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
মেঝেতে গলায় দড়ি দিয়ে বাঁধা এবং মুখ রক্তাক্ত অবস্থায় শিশুটিকে পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন তার স্বজনরা।
শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ময়নাতদন্তে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যার আলামত মেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ।
শনিবার সকালে শিশুটির বাবা মামলা করেন ওয়ারী থানায়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির নিরাপত্তা প্রহরীসহ ছয়জনকে আটক করে পুলিশ। আর রবিবার কুমিল্লা থেকে ধরা হয় প্রধান সন্দেজভাজন হারুন অর রশিদকে।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মেয়েটির বাবা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। মেয়েটা মাকে বলেছে, মা মাত্র ১০ মিনিটের জন্য ওই বাসায় যাব, একটু খেলে চলে আসব। এসে তোমার পড়াগুলো দিয়ে দেব। এরমধ্যেই তাকে আর পাওয়া গেল না।’