নিজস্ব প্রতিবেদক:ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুনুর রশীদের নেতৃত্বাধীন কমিটির সাত বছর মেয়াদে ২০ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আওয়ামী যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি পত্রপত্রিকার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই দফা শোকজ করা হয়েছিল সংগঠনটির ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে। সংগঠনটির একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অবৈধভাবে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে গতকাল রাতে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে র্যাব। তার গ্রেফতারের খবর শোনে সংগঠনের নেতাকর্মী নিয়ে নিজ কার্যালয়ে অবস্থান নেন ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। এর দু-দিন আগেই তাদের দ্বিতীয়বারের মতো শোকজ করা হয়েছিল।
গতরাতে রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকায় ইয়ংমেন্স ক্লাবের নিষিদ্ধ জুয়ার কেসিনোতে অভিযান চালিয়ে ১৪২ জন নারী-পুরুষকে আটক করে র্যাব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় এক নেতা জানান, প্রতিটি বিভাগের জন্য যুবলীগের আলাদা আলাদা ৯টি নিজস্ব ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। এসব ট্রাইব্যুনালের প্রধান থাকেন সংগঠনটির এমন একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য, যিনি বিগত কমিটিতে ওই বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এ ছাড়া সংগঠনের চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক, দফতর সম্পাদক মিলিয়ে ২০ জনের মতো সদস্য থাকেন প্রতি ট্রাইব্যুনালে।
সংগঠনটির ওই নেতা জানান, বর্তমান কমিটির মেয়াদে বিভিন্ন অভিযোগে সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ ২০ নেতার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের উদ্বৃতি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে দুই দফায় ওই দুই নেতাকে (সম্রাট-খালেদ) শোকজ করা হয়।
ওই নেতা আরও বলেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট ও সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে প্রথমবার শোকজের চিঠি পাঠানোর পর জবাব মনঃপূত না হওয়ায় সম্প্রতি দ্বিতীয়বার শোকজের চিঠি পাঠানো হয়। এই চিঠির জবাব নিয়ে আগামী শনিবার তাদের সরাসরি ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল।
যুবলীগ সূত্রে জানা গেগে, ইতোমধ্যে ভূমি দখলের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সংগঠনটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ আতিয়ার রহমান দিপু, রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজা, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর ছেলে ও ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল, সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মাতবর, নিজ স্ত্রীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে সাভার থানা যুবলীগের সভাপতি সেলিম মণ্ডল, ধর্ষণের অভিযোগে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সভাপতি মো. লিটন রানাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন, অভিযোগের একটা কাগজ, একটা তথ্য-প্রমাণের দরকার হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তো দালিলিক কোনো প্রমাণ বা অভিযোগের কাগজপত্র আমাদের কাছে সেভাবে আসে না। বাদী, যিনি কম্প্লেইনার নিশ্চয়ই একটা ডকুমেন্ট দিয়েই তো করবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমরা পত্র-পত্রিকায় যে অভিযোগগুলো আসছে, কাযনির্বাহী সংসদের যে কথাগুলো আসছে, সেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমরা শোকজ করছি।
তিনি বলেন, আমরা যে ব্যবস্থাটা নেই, সেটা তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে হতে হবে। সত্যতা যদি পাওয়া যায়, তখন আমরা বহিষ্কার করি। আর যদি সেই বিষয়টি যদি ফৌজদারি পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে আমরা সংশ্লিষ্ট থানাকে অনুরোধ করি ব্যবস্থা নিতে।
‘ক্যাসিনোর বিষয়টি জানার জন্য আমরা নতুন করে শোকজ দিয়েছি। এই বিষয়গুলো আসার পরই আমরা ট্রাইব্যুনালে তাদের মুখোমুখি করবো সত্যতা জানার জন্য। এটা আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করে নাই, পত্রিকার ভাষা অনুযায়ী আমরা শোকজ করেছি’, -বলেন যুবলীগ সভাপতি।