নিজস্ব প্রতিবেদক:‘আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা (নেত্রী) কোনো কমিটি ভাঙার নির্দেশ দেননি’ বলে দাবি করেছেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এমন দাবি করেন। ‘আওয়ামী যুবলীগের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে’- একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন সংবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘কারও সাথে আমার কথা হয়নি। সবই গুজব। কোনো কমিটি বিলুপ্ত করা হয়নি। তবে শোকজের বিষয়টি ঠিক আছে।’
তিনি বলেন, ‘নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে তাদের ডাকা হয়েছিল। কিছু নথিপত্র চাওয়া হয়েছিল। তারা দিয়েছেন। আমাদের ব্যবস্থা নেয়ার আগেই তো একজনকে গ্রেফতার করা হলো। এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যেতে হবে।’
ওই গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ প্রসঙ্গে আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমি মামলা করব। কারণ আমার সাথে কথা বলে নিউজ করা উচিত ছিল। কমিটি বিলুপ্ত করতে হবে, নেত্রী এমন কোনো নির্দেশ দেননি’ বলেও দাবি করেন আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী।
রাজধানীর মতিঝিলের ফকিরেরপুল এলাকায় ইয়াংমেন্স ক্লাবের অবৈধ ক্যাসিনোর মালিক ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গতকাল বুধবার নিজ বাসা থেকে অবৈধ অস্ত্র ও মাদকসহ আটক করা হয়। ওই ঘটনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংবাদকর্মীদের কাছে ওমর ফারুক চৌধুরী প্রশ্ন রাখেন, আওয়ামী যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নেয়নি?
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ অত্যন্ত সুসংগঠিত একটি ইউনিট। তাদের বিরুদ্ধে এতদিন কোনো অভিযোগ এলো না, হঠাৎ কেন অভিযোগ আসল? অভিযোগ থাকলে এতদিন কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি?’ খালেদের গ্রেফতার দল ও যুবলীগকে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র কি-না, সে প্রশ্নও রাখেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।
যুবলীগের শ্রেষ্ঠ ইউনিটের শ্রেষ্ঠ সংগঠক ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে বলেও সে সময় দাবি করেন যুবলীগ চেয়ারম্যান।
তিনি আরও বলেন, ‘নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তা আওয়ামী যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দলীয় কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ তিনি এ সময় অনলাইন সাংবাদিকদেরও সমালোচনা করেন। বলেন, অনলাইন মিডিয়ায় আসল ৫শ’ জায়গায় ক্যাসিনো চলছে, তো ৫শ’ জায়গায় তো ক্যাসিনো একদিনে হয়নি। প্রিন্ট মিডিয়ায় আসলো না কেন?
তার এমন মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। তবে র্যাবের অভিযানের পরদিন বৃহস্পতিবার বিবিসি’র সাথে সাক্ষাৎকারে যুবলীগ চেয়ারম্যান র্যাবের অভিযানকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ফলে এটিকে তিনি শুভ উদ্যোগ হিসেবে দেখেন। একই সঙ্গে তিনি আগের দাবিতে অনড় থাকেন। বলেন, ‘একই কথাই তো। আমি অন্যায় করেছি, তাতে এতদিন পর ব্যবস্থা কেন? সেটা যদি অঙ্কুরেই এই ব্যবস্থাগুলো নেয়া হতো, নিশ্চয়ই আজকে আপনি এসব প্রশ্ন করতেন না।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ক্যাসিনোতে পুলিশের অভিযান চালানোর বিষয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যানের মন্তব্য ‘তার নিজস্ব। আমার এখানে কিছু বলার নেই।’
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও হারুনুর রশীদের নেতৃত্বাধীন যুবলীগের কমিটির সাত বছর মেয়াদে ২০ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আওয়ামী যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি কয়েকজনকে শোকজও করা হয়। এর মধ্যে সম্রাট ও খালেদকে দুই দফা শোকজ করা হয়েছিল বলে যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংগঠনটির এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ওই দুই নেতাকে (সম্রাট-খালেদ) শোকজ করা হয় দুদিন আগে। প্রথমবার শোকজের চিঠি পাঠানোর পর জবাব মনঃপূত না হওয়ায় সম্প্রতি দ্বিতীয়বার শোকজের চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠির জবাব নিয়ে আগামী শনিবার তাদের সরাসরি ট্রাইব্যুনালের মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল।