আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আসামের চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ মানুষের নাম তালিকায় ঢোকানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার দিল্লিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করার পর মমতা জানান, পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করা নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে কোনো কথা হয়নি। তবে নিজের রাজ্যে কোনোভাবেই এনআরসি চালু করতে দেবেন না তিনি।
বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য বলছে, রাজ্য সরকার কী বলছে তাতে তাদের কিছু যায় আসে না। দেশের স্বার্থেই আসামের মতো পশ্চিমবঙ্গেও নাগরিক তালিকা তৈরি করা হবে।
বৈঠক শেষে মমতা বলেন, আসামে যেভাবে এনআরসি থেকে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, আমি একটা চিঠি দিয়ে উনাকে (অমিত শাহ) বলেছি এটা মোটেও ঠিক হয়নি। এদের মধ্যে অনেক বাঙালির নাম বাদ গেছে। বাংলাভাষীরা যেমন বাদ পড়েছেন, হিন্দিভাষী বা গোর্খারাও বাদ পড়েছেন। হিন্দুরাও আছেন, মুসলিমরাও আছেন। এমন কী অনেক অসমীয়ার নাম পর্যন্ত তালিকায় নেই। কাজেই আমরা মনে করি, এই তালিকা ভুলে ভরা। মন্ত্রীকে আমরা বলেছি যাদের নাম তালিকায় নেই তাদের নাম সেখানে তুলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। কারণ এই ভারতীয়রা একটা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।
নিজের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি চালু করা নিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে কোনো কথা হয়নি বলে দাবি করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থান তো সবারই জানা; পশ্চিমবঙ্গে এনআরসির কোনো প্রয়োজন নেই। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও একই কথা বলছেন। আমাদের বক্তব্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন দিয়ে শুনেছেন, বিষয়টা দেখবেনও বলেছেন।
মমতার সঙ্গে বৈঠকের পর অমিত শাহর মন্ত্রণালয় অবশ্য তা নিয়ে কোনো বিবৃতি জারি করেনি। ওই বৈঠকের আলোচনা নিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্যও মেলেনি। তবে বিজেপির দাবি, এই বৈঠকের পরও এনআরসি নিয়ে তাদের অবস্থান বিন্দুমাত্র পাল্টাবে না।
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারতী ঘোষ বিবিসি বাংলাকে বলেন, আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার, এ দেশের কোনো বৈধ নাগরিকের সঙ্গে অন্যায় করা হবে না। তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হবে না, কিংবা নতুন আশ্রয়ও তাদের খুঁজতে হবে না। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার বলছেন, বিদেশ থেকে আসা হিন্দুদের আমরা শরণার্থীর মর্যাদা দিই। তারাও এদেশে থাকতে পারবেন।
এনআরসি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তি কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কি আমলে নিচ্ছে না জানিয়ে ভারতী ঘোষ বলেন, মমতা কী বললেন তা নিয়ে বিজেপি বিন্দুমাত্র ভাবছে না। দেশের জন্য কোনটা ভাল তা সবাই জানে, আমরা সেটাই করব।
তিনি আরও বলেন, এই মমতা ২০০৪ সালে রাজ্যে এনআরসি চেয়ে পার্লামেন্টে হইচই বাধিয়ে দিয়েছিলেন, স্পিকারের দিকে কাগজ ছুঁড়ে মেরেছিলেন। আর আজ রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য তিনি এনআরসি রুখতে চান। আসলে তিনি একজন চরম সুবিধাবাদী।