নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর রূপনগর থানার শিয়ালবাড়ি বস্তির শিশুরা গিয়েছিল বেলুন কিনতে। ভ্যানগাড়িতে করে বেলুন বিক্রি করতেন ওই বেলুনওয়ালা। সিলিন্ডারের গ্যাসে ফোলাতেন বেলুন। সেই সিলিন্ডার হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়। পথের মধ্যেই লাশ হয় চার শিশু। একজনের লাশ পাওয়া যায় বস্তিতে। নিহতরা হলো- আট বছর বয়সী রায়হান, সাত বছর বয়সী নূপুর, নয় বছরের শাহীন, ছয় বছর বয়সী ফারহানা ও আরও একজন সাত বছর বয়সী শিশুর নাম জানা যায়নি।
আজ বুধবার বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে এ ঘটনা ঘটে। মুহূর্তেই পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহতের স্বজনদের আহাজারি ও আহতদের নিয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়।
ফায়ার সার্ভিস মিরপুরের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন সিটিজেন নিউজকে বলেন, ঘটনাস্থলে শুরু থেকেই আমি ছিলাম। আমাদের কাছে মেসেজ ছিল একটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরপর আমরা তিনটি ইউনিট সেখানে যাই। ঘটনাস্থলে ৪টি শিশুর ডেডবডি দেখতে পাই। এরপর বস্তির ভেতের আরেক শিশুর মরদেহ পাই। লাশগুলো উদ্ধার করে আমরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি।
তিনি আরও বলেন, ওই ব্যক্তি ভ্যানগাড়িতে করে বেলুন বিক্রি করতেন। বেলুনে বাতাস ভরার সময় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে ভ্যান গাড়িটিও খণ্ড খণ্ড হয়ে গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী গাড়িচালক মো. মোস্তফা সিটিজেন নিউজকে বলেন, ‘আমি ১২ নম্বর রোডে ছিলাম। একটি বিকট শব্দ শুনে ১১ নম্বরের দিকে ছুটে যাই। যাওয়ার সময় দেখি রিকশায় একজনকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তার মাথার একটা অংশ রক্তাক্ত। এরপর আমরা শিয়ালবাড়ি বস্তির পাশের চিৎকার শুনি এবং গিয়ে দেখি সেখানে চারজন শিশু পড়ে আছে নড়াচড়া করছে না।’
তিনি বলেন, যে বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়েছে সেই বেলুনওয়ালা প্রায়ই আসতো। লোহার জিনিস, কাঁচের বোতল ও টিনের কৌটার বিনিময়ে বেলুন বিক্রি করতো। বিস্ফোরণের সময় তার কাছে থাকা কনডেনস মিল্কের কৌটা ছিটকে গিয়ে আশপাশের অনেকে আহত হন। কমপক্ষে ২০-২৫ জনকে আশপাশের হাসপাতালে ভর্তি হতে দেখেছি।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিহত এক শিশুর খালা জানান, তার বোনের মেয়ে বাবার কাছে বেলুন কেনার বায়না ধরলে তার বাবা তাকে টাকা দিয়ে বেলুন কিনতে পাঠান। কিছুক্ষণ পরে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এসে মেয়ের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরও জানা গেছে, কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারও নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। কারও চেহারা ঝলছে গেছে। ছোপ ছোপ কালচে তাজা রক্ত রাস্তায় গড়াচ্ছে। ৬-১৪ বছর বয়সী ১০-১২ জন ক্ষুদে শিশু মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিল। উফ! বীভৎস ও মর্মান্তিক সেই দৃশ্য দেখে বুক আঁতকে ওঠে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে ৭ জনকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলো : জান্নাত (২৫), জুবায়ের (৮), সাদেকুর (১০), নাহিদ (৭), জামিল (১৪), মরিয়ম (৮/৯) ও অজ্ঞাত (৩০)।
অন্যদিকে আহতদের ১৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১২ জনই শিশু, দু’জন পুরুষ এবং একজন নারী। তারা হলো : জুয়েল (২৫), সোহেল (২৬), জান্নাতী (২৫), তার বোন তানিয়া (৮), ভাই বায়েজিদ (৫), জামেলা (৭), অজ্ঞাত পরিচয় শিশু (৫) (তার অবস্থা আশঙ্কাজনক), মীম (৮), অজুফা (৯), মোস্তাকিম (৮), মোরসালিনা (৯), নিহাদ (৮), অর্ণব ওরফে রাকিব (১০), জনি (১০) ও সিয়াম (১১)।
এদিকে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে আসেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, এ ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবহিত করা হয়েছে। আহত ও নিহতদের পাশে দাঁড়াতে তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।