জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক: ঢাকার সাবেক মেয়র বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবরে তার সহকর্মীদের মধ্যে বিষাদের ছায়া ভেসে উঠেছে। খোকাকে নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর দুটি লেখা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে।
আব্বাস লিখেছেন, ‘প্রিয় খোকা, এইমাত্র আমি জানতে পারলাম যে, তোমার শরীর খুব খারাপ তুমি হাসপাতালে শয্যাশায়ী। জানার পর থেকে আমার মানসিক অবস্থা যে কতটা খারাপ; এই কথাটুকু কারও সঙ্গে শেয়ার করব সেই মানুষটা পর্যন্ত আমার নেই। তুমি-আমি একসঙ্গে রাজনীতি করেছি অনেক স্মৃতি আমার চোখের সামনে এই মুহূর্তে ভাসছে। তোমার আর আমার দীর্ঘ এই পথচলায় কেউ কেউ তাদের ব্যক্তিস্বার্থে তোমার আর আমার মাঝে একটা দূরত্ব তৈরি করে রেখেছিল, তবে তুমি আর আমি কেউই সেই দূরত্ব রয়েছে বলে কখনোই মনে করিনি।’
‘আমি জানি না, তোমার সাথে আমার আর দেখা হবে কিনা। আমার এই লেখাটি তোমার চোখে পড়বে কিনা বা তুমি দেখবে কিনা তাও আমি জানি না, তবে বিশ্বাস করো তোমার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানার পর থেকেই বুকের ভেতরটা কেন যেন ভেঙে আসছে। আমি বারবার অশ্রুসিক্ত হচ্ছি। মহান আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দুহাত তুলে তোমার জন্য এই বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করছি, তিনি অবশ্যই তোমাকে সুস্থ করে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনবেন।’
‘তুমি আর আমি কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, বুকে বুক মিলিয়ে রাজনীতির মাঠে কাজ করে যাব। না হয় সেই আগের মতোই স্বার্থপর কোনো মানুষদের জন্য আব্বাস আর খোকা বাইরে বাইরে দূরত্বের সেই অভিনয়টা করে যাবে, আর ভেতরে থাকবে দুজনের প্রতি দুজনের অন্তর নিঙরানো ভালোবাসা। আল্লাহ্ তোমার সুস্থতা দান করুক। তুমি ফিরে এসো খোকা, তুমি ফিরে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকব।’
টুকু লিখেছেন, ‘২০১৯ সাল আমার জীবনের চলার পথে হাতেগোনা কয়েকজন বন্ধু ছিল তাদের জীবনপ্রদীপ নেভার মিছিলে মাহফুজ জাহাঙ্গীর সাহান ছিল। গতরাত ২.৩০টার সময় আমেরিকা থেকে ফোন আসল। ভয়ে ভয়ে ফোন ধরলাম যে ভয় পেয়েছিলাম সেটাই হলো বন্ধু খোকা (সাদেক হোসেন, ঢাকার সাবেক মেয়র) বেশ কত বছর হলো মরণব্যাধি ক্যানসারের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। গত মাসে দেখা করে আসলাম দুই বন্ধু সাংবাদিক মনির হায়দারকে সাথে নিয়ে। দুপুরে লাঞ্চ করলাম নামি stack house এ অনেক পুরোনো রেস্তোরাঁ। বন্ধু আমার ভালো খেতে পারল না। ওর মতো বন্ধু পাওয়া ভাগ্যের জোর। আমার নিউইয়র্ক পৌঁছাতে রাত একটা বাজে। অসুস্থ বন্ধু আমার পিক করার, হোটেলের ব্যবস্থা সব। আমি হোটেলের রুমে যাওয়া নিশ্চিত করে শুতে যায়। দুইটা দিন আনন্দে কেটে ছিল এত তাড়াতাড়িতে এই যুদ্ধে হেরে যাবে বুঝি নাই। খবর এলো ফোনে ডাক্তার জবাব দিয়েছে বন্ধু আর মাত্র হাতেগোনা কয়দিনের পথিক। সারারাত ঘুম হলো না, কত স্মৃতি ৬০ এর দশকে রাজপথ কাঁপানো মিছিলের স্টেডিয়ামে (stadium) খেলা দেখা গোপীবাগের মোড়ে সাবুর সাথে লুচি-সবজি খাওয়া তারপর মুক্তিযুদ্ধের কত কথা।’
‘মৃত্যপথের যাত্রী বন্ধুর সাথে কথা হলো। একটা কথা যতদিন বাঁচব কানে ভাসবে দোস্ত চলে যাচ্ছি। ডাক্তার জবাব দিসে। কষ্ট একটা সেদিন মৃত্যু জয় করে দেশ স্বাধীন করলাম সেই দেশের মাটিতে আমার কবর হবে না? জবাব দিতে পারি নাই বুকের মাঝে রক্ত ঝরেছে। এই আজকের বাংলাদেশ।’