নিজস্ব প্রতিবেদক: সমগ্র জাতিকে ধমক দিতে পারতেন, শাসন করতে পারতেন একজন মানুষ। তখন জাতির যিনি নেতা যিনি ছিলেন, তাকেও শাসন করতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরে এখন মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর কথা আলোচনা করা হচ্ছে না।
শুক্রবার (২২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি আয়োজিত মওলানা ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘মওলানা ভাসানী ও আমাদের সময়ের রাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “রাজনীতিতে গান্ধীর ধারা ছিল অহিংস, মওলানার রাজনীতি ছিল বলপ্রয়োগের। তাকে টাইম পত্রিকা ‘প্রফেট অব ভায়োলেন্স’ আখ্যা দিয়েছিল ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে, তাকে নেতিবাচকভাবে উত্থাপন করার জন্য। কিন্তু মওলানা যে আগুন জ্বালিয়েছিলেন, তা কাউকে আগুনে পুড়িয়ে মারবার নয়, তা মুক্তির আলো জ্বেলেছিল।”
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আজকে ভিনদেশি রাষ্ট্রের হুকুমে আমাদের নীতি নির্ধারণ হয়। নরেদ্র মোদি যখন শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষের আয়োজনের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি হন, তখন আমরা কোন জায়গায় থাকি। যেখানে অসমাপ্ত আত্মজীবনী পড়লে আমরা বুঝি শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ, তার সঙ্গে আমাদের রাজনীতির যত দূরত্বই থাকুক। মওলানা ভাসানী সত্যি কথা বলা শিখিয়েছেন। সেই সত্যের শক্তির ওপর ভরসা করেই আমাদের দেশকে মুক্ত করার রাজনীতি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ কোনো একক ব্যক্তির অবদান নয়। বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে যারা ভূমিকা রেখেছেন, সন্দেহাতীতভাবেই মওলানা ভাসানী তাদের মাঝে অন্যতম। ভোটের রাজনীতি বা ষড়যন্ত্রের রাজনীতি নয়, ভাত-কাপড়ের রাজনীতি দিয়েই তিনি মানুষকে সংগঠিত করেছেন। জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করেই তিনি আপসহীনভাবে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন। আজকেও মুক্তি পেতে হলে জনগণের সংগ্রামের ওপর ভিত্তি করেই মাওলানার রাজনীতিকে মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হব।’
লেখক ও কলামিষ্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে, ভাসানীকে আজকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে স্মরণ করা হয় না। তার ভূমিকাকে আড়াল করা হয়। অথচ ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ, কৃষক ও শ্রমিক আন্দোলনসহ মুক্তির সংগ্রামের সকল ঘটনায় মওলানা ভাসানী ছিলেন অগ্রনায়ক।’
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “খুব বিখ্যাত ছিল মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ‘খামোশ’ বলা। সমগ্র জাতিকে ধমক দিতে পারতেন, শাসন করতে পারতেন একজন মানুষ। সমগ্র জাতির যিনি নেতা তখন ছিলেন, তাকেও শাসন করতে পারতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরে এখন তার কথা আলোচনা করা হচ্ছে না।”
আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন মওলানা ভাসানীর একান্ত সহচর সৈয়দ ইরফানুল বারী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, গণসংহতি আন্দোলনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল এবং কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহাসনাইন বাবু প্রমুখ।