বিশেষ প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অর্থের নেশা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থ সম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু অর্থপ্রাপ্তি একটা নেশা। এটা একটা নেশার মতো হয়ে যায়। মানুষ অন্ধের মতো ছুটতে থাকে। তাতে পরিবার ধ্বংস হয়, ছেলেমেয়েরা বিপথে যায়, মাদকাসক্ত হয় বা ভিন্ন পথে চলে যায়। হুশ থাকে না। ছুটতেই থাকে।
এ দুরারোগ্যব্যাধি থেকে যদি কেউ মুক্ত হতে পারে, দেশের জন্য নিবেদিত প্রাণ হতে পারে, তাহলে সেদেশে উন্নতি হয়, উন্নতি হবে। এটাই হলো বাস্তবতা। লোভ-লালসা বাদ দিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। এটা অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিবাজ যেই হোক তাকে ছাড়া হবে না।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
লক্ষ্য পূরণে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি একটি অনুরোধ করব সবাইকে। জীবনে কী পেলাম, পেলাম না সেই চিন্তা না করে- মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কতটুকু দিতে পারলাম সেই চিন্তাটা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের থাকতে হবে।
এই মাটিতে কোনো চক্রান্ত সফল হবে না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করতে চায়, ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে এই দেশকে যারা ক্ষতি করতে চায় বা তৈরি করতে চায়, আমরা তা হতে দেবো না। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এবং যিনি সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তার ত্যাগ কোনোদিন বৃথা যেতে পারে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর বা পাকিস্তানি দালালচক্র যারা অন্তরে অন্তরে পাকিস্তান প্রেমে ভোগে, তাদের চক্রান্ত এই মাটিতে কখনও সফল হতে পারে না।
বাংলাদেশের বিজয়ের সময়কার ঘটনা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশের মানুষের বিজয় হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর আর আমাদের বিজয় হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর। বন্দি থাকার কারণে ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের স্বাদ পাইনি আমরা। পরদিন মুক্ত হওয়ার পর বাড়িতে পাকিস্তানিরা যে পতাকা তুলেছিল আমার মা নিজ হাতে পাকিস্তানি ফ্লাগ নামিয়ে পায়ের নিচে মাড়াতে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দেশের অবস্থার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর বারবার ক্যু হয়েছে, ১৮-১৯টা ক্যু হয়েছে এদেশে। অত্যাচার-নির্যাতন চলেছে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর। সে সময় যদি কেউ সাহস করে দাঁড়াতো তাহলে তো এত অত্যাচার হতো না। বারবার ক্যু হতো না।
দেশের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শত বাধা-ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের মাতৃ মৃত্যুহার কমেছে, শিশু মৃত্যুহার কমেছে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাবেক ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচি।