শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান
সংবাদ শিরোনাম ::

চীনে ৭০ শতাংশ শিশু মায়োপিয়ায় আক্রান্ত

  • আপডেট টাইম : বুধবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২০
  • ২৯৬ বার পঠিত

অনলাইন ডেস্ক: প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ চীনে মায়োপিয়ায় (ক্ষীণদৃষ্টি) আক্রান্ত অন্তত ৪৫ কোটি মানুষ। অর্থাৎ দেশটিতে প্রতি তিনজনের একজনই চোখের সমস্যায় ভুগছেন, যেখানে বিশ্বব্যাপী এ সংখ্যা গড়ে প্রতি পাঁচজনে একজন। চীনে মায়োপিয়ার দুর্ভোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত স্কুলশিশুরা। ২০১৮ সালে ১০ লাখ শিশুর ওপর চালানো এক সরকারি জরিপে দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী ৭২ শতাংশ শিশুই মায়োপিয়ায় ভুক্তভোগী। ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল ৫৮ শতাংশ।

ব্রিটিশ ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মায়োপিয়া হচ্ছে গ্লুকোমার মতো চোখের ভয়ানক রোগের প্রাথমিক লক্ষণ। এ রোগে চোখ পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যেতে পারে। ২০১৮ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মায়োপিয়ার প্রাদুর্ভাব স্বীকার করে এটিকে অনেক বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং নির্মূলের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, চীনে মায়োপিয়া ছড়িয়ে পড়ছে মূলত জিনগত কারণে। এই সমস্যা পূর্ব এশীয় ও শেতাঙ্গদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, ব্রিটেনের ১৭ বছর বয়সী শেতাঙ্গদের মধ্যে ১৯ শতাংশই মায়োপিয়ায় আক্রান্ত। যদিও এতে জীবনযাত্রার অনেক বড় ভূমিকা আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, মায়োপিয়ায় জিনের ভূমিকা খুবই কম। এতে যেসব জিন জড়িত, তারা পরিবেশগত কারণে প্রভাবিত হতে পারে। বেশিরভাগ সময় এটি হতে পারে বাইরের কার্যকলাপের অভাব, অতিরিক্ত কাজ এবং অধিক সময় কাছের বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে। পরীক্ষা-আসক্ত সংস্কৃতির সঙ্গে সহজলভ্য স্মার্টফোন ও কম্পিউটার গেমস ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ায় চীনে এ সমস্যা আরও প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

২০০৮ সালে একদল অস্ট্রেলীয় গবেষকের পাওয়া পরীক্ষার ফলাফলও একই মতবাদ সমর্থন করে। তারা সিডনি ও সিঙ্গাপুরে শত শত চীনা শিশুর ওপর গবেষণা চালান। এতে দেখা যায়, সিডনির মাত্র তিন শতাংশ শিশু সাত বছর বয়সের আগে মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। বিপরীতে হোমওয়ার্ক-আসক্ত সিঙ্গাপুরে এ হার পাওয়া গিয়েছিল ২৯ শতাংশ।

চীনা কর্মকর্তারা শুধু স্বাস্থ্যগত কারণেই মায়োপিয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন নন; বরং জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও চিন্তায় পড়েছেন তারা। দেশটির সরকারি পত্রিকা লিগ্যাল ডেইলি জানিয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক স্বাভাবিক দৃষ্টিসীমা সম্পন্ন সেনা পাওয়া না গেলে চীনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে। ইতোমধ্যে গত বছর দেশটির নৌবাহিনী তাদের নতুন নৌসেনা নিয়োগের যোগ্যতায় দৃষ্টিসীমার চাহিদা শিথিল করতে বাধ্য হয়েছে।
এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রতিশ্রতি দিয়েছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। ২০১৮ সালে তারা জানিয়েছিল, এই দশক শেষ হওয়ার আগেই ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সী মায়োপিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৬০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। এছাড়া বছর দুয়েক আগের ১৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী ভুক্তভোগীর সংখ্যা ৮০ শতাংশ থেকে নামিয়ে অন্তত ৭০ শতাংশে আনার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল তারা।

দলটির পক্ষ থেকে সেসময় মায়োপিয়া নিয়ন্ত্রণে প্রচলিতের পাশাপাশি বেশ কিছু অপ্রচলিত পরামর্শ কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ছিল- স্কুলগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা দিনে অন্তত এক ঘণ্টা সূর্যের আলোয় খেলাধুলা করে (অনেকের বিশ্বাস, সূর্যের আলো মায়োপিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে)।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম দুই বছর – যে সময় শিশুদের চোখ অতিসংবেদনশীল থাকে; তাদের যেন কোনো লিখিত হোমওয়ার্ক না দেয়া হয়। পরের দুই বছরে প্রতিদিন বড়জোর এক ঘণ্টার কাজ দেয়া যাবে। ভিডিও গেম নির্মাতারা নতুন গেম ও ডিভাইস কম বাজারজাত করবে; যেন শিশুরা এর পেছনে বেশি সময় দিতে না পারে।

স্কুল ও পরিবারগুলোকে শিশুদের মিষ্টিজাতীয় খাবার বাদ দিয়ে বেশি বেশি মাছ খেতে উৎসাহ দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাছে উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া অনেক চিকিৎসকও চিনিজাতীয় খাবার বাদ দিতে বলেন, যদিও এতে ঠিক কী উপকার হয় তা পরিষ্কার নয়।

সূত্র : দ্য ইকোনমিস্ট।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com