নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: পার পাচ্ছেন না স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ। তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে কাজ করছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম দেশে ফিরলে আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পর তদন্ত শুরু হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
শেষ সময়ে এসে দেদার পদোন্নতি ও পদায়নে আর্থিক লেনদেন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে জ্যেষ্ঠতা ভঙ্গসহ অনিয়ম, প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে গড়িমসিসহ বিস্তর অনিয়মের অভিযোগ আছে আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের কর্মকর্তা ও অস্থায়ী কর্মচারীদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতির অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে। অনিয়ম-দুর্নীতির এসব অভিযোগ উল্লেখ করে ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টারিংও করেছেন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা। পত্র-পত্রিকাতেও এ নিয়ে লেখা হয়েছে। এসব আমলে নিয়ে সাবেক এই প্রধান প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে তদন্তের প্রস্তুতি নিয়েছে মন্ত্রণালয়। গত ৯ মে আবুল কালাম আজাদ অবসরে গেছেন। বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে তার বিদায়ী সংবর্ধনাটিও করা হয়েছে তড়িঘড়ি করে।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর সব ধরনের অনিয়মের তদন্ত হবে। তদন্তে সত্যতা মিললে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী আনোয়ারুল হক ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এখনো আমরা কোনো আনুষ্ঠানিক তদন্তে যাইনি। এলজিআরডি মন্ত্রী দেশের বাইরে আছেন। তিনি দেশে ফিরলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
মন্ত্রী বর্তমানে অসুস্থ। সিঙ্গাপুরে তার বাইপাস সার্জারি হয়েছে। ২২ মের পরে তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, এলজিইডির সদস্য বিদায়ী প্রধানের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে তোলপাড় হয়। বর্তমান সরকারের সময় বিএনপিপন্থী আবুল কালাম আজাদের মতো ব্যক্তি কী করে এত দিন এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রধান ছিলেন, তা নিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, তাকে যখন প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন অতিরিক্ত প্রকৌশলীদের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ ছিলেন। তখন তার রাজনৈতিক পরিচয় অতটা খতিয়ে দেখার সুযোগ ছিল না। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে বসার পর সরকারবিরোধীদের সঙ্গে তার আঁতাতের বিষয়টি কাজের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি বড় বড় প্রকল্পের টাকা পর্যন্ত ছাড় করেননি। এমনকি প্রকল্প পরিচালকদের চিঠি দিয়ে প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে নিষেধ করেন। তিনি তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে বলেছেন, ক্ষমতায় কে আসে তা নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি কিছু করতে চাননি।
এলজিইডির বিভিন্ন প্রকল্পে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। এলজিইডির নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আবুল কালাম আজাদের মেয়াদকালে বিভিন্ন প্রকল্পের আউটসোসিংয়ের মাধ্যমে যেসব লোক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের বেশির ভাগই পাবনা ও রাজশাহীর। আশ্চর্যজনক হলো তাদের প্রায় সবার ব্যাপারেই বিএনপির স্থানীয় নেতাদের সুপারিশ ছিল।
এলজিইডির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, সাবেক প্রধান প্রকৌশলীর অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় এলজিইডির যোগ্য অনেক কর্মকর্তা পদ বঞ্চিত হয়েছেন। অসম্মানিত হয়েছেন। তার কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই সংস্থার কাজের গতিও শ্লথ হয়ে এসেছিল। তাই তার অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া জরুরি। যা ভবিষ্যতের জন্যও বার্তা হয়ে থাকবে যে, দুর্নীতি করে কেউ রেহাই পাবে না।