নিউজ ডেস্ক: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার আলোচিত ঢাকা ফেরত সেই স্বাস্থ্যকর্মী নির্জন পুকুরে নয়, পরিবারের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় স্বেচ্ছায় নিজ বাড়ির আঙিনার পুকুরপাড়ে অস্থায়ী ঘরে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। উপজেলার সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের লখণ্ডা গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী লোপা মল্লিক তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু ২৭ ও ২৮ এপ্রিল তাকে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক গণমাধ্যমে নির্জন স্থানে পুকুরের মধ্যে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বাধ্য করা হয়েছে বলে একটি মহল বিভ্রান্তিমূলক খবর প্রকাশ করে। যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্যকর্মীর পরিবার, এলাকাবাসী ও প্রশাসনের একাধিক সূত্র।
এ প্রসঙ্গে কোভিড-১৯ প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে জেলা পর্যায়ে চলমান ত্রাণ কার্যক্রম সুচারুরূপে সমন্বয়ে গোপালগঞ্জ জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদুল্লা খন্দকার যুগান্তরকে বলেন, ‘একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে স্বাস্থ্যকর্মীর কোয়ারেন্টিনের খবর তথ্যবিভ্রাট করে প্রকাশ করেছে। অথচ সে পারিবারিক সিদ্ধান্তে নিজ বাড়ির আঙিনার পুকুরপাড়ে অস্থায়ী জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে। রাতের বেলায় সেখানে পরিবারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং কিছু গণমাধ্যমে একটি মহল বিভ্রান্তিকর খবর প্রকাশ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘কোটালীপাড়ার লখণ্ডা গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী লোপা মল্লিকের কোয়ারেন্টিনের খবর প্রকাশ হওয়ার পর আমি উপজেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। আমরা ওই স্বাস্থ্যকর্মীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোয়ারেন্টিনে রাখতে অনুরোধ জানালে তার পরিবার তাকে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। পরে তাকে কোয়ারেন্টিন করতে তাদের ঘরের সঙ্গে অস্থায়ী ভিত্তিতে একটি ঘর তৈরি করে দেয়া হয়েছে। সেখানে ওই স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিন করছেন। খুশির খবর যে, সবশেষ স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাসের ফলাফল নেগেটিভ এসেছে। এরপরও সতর্কতার জন্য তিনি ওই অস্থায়ী ঘরেই অবস্থান করছেন।’
এ বিষয়ে স্বাস্থ্যকর্মী লোপা মল্লিক যুগান্তরকে বলেন, পরিবারের নিরাপত্তার জন্য আমি স্বেচ্ছায় বাড়ির আঙিনায় পুকুরপাড়ে কোয়ারেন্টিনে ছিলাম। এখানে থাকতে আমাকে কেউ বাধ্য করেনি। তিনি আরও বলেন, আমার অসুস্থতার খবর শুনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর থেকে কোয়ারেন্টিন করতে একটি ঘর তৈরি করে দিয়েছে। এছাড়া খাদ্য ও চিকিৎসা উপকরণসহ ঘরে থাকতে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নিজে একজন স্বাস্থ্যকর্মী হওয়ায় পরিবার-পরিজনকে নিরাপদে রাখতে নিজ থেকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন লোপা মল্লিক। প্রত্যন্ত পল্লী জনপদের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এ স্বাস্থ্যকর্মীর বাসায় কোয়ারেন্টিন করার মতো আলাদা ঘর না থাকায় তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা এটা সহজভাবে নিয়েছিলেন এবং রাতে তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করতেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় কোনো রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনের কেউ তাকে বাধ্য করেনি। প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় বাড়ি হওয়ায় এ ঘটনা প্রশাসনের দৃষ্টিতে আসতে কিছুটা সময় লেগেছে।
তবে খবর পাওয়া মাত্রই স্থানীয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। একইসঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার ঘটনাস্থান পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন টিমে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কোটালীপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।