নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা ভাইরাসের রোগীদের সুচিকিৎসা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষভাবে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে যাচ্ছে সরকার।
এসব প্রকল্পের মধ্যে দুটি সরাসরি করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য অবদান রাখবে। এই প্রকল্পগুলোর মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে আগামী মঙ্গলবার (২ জুন) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এই প্রকল্পগুলো উপস্থাপন করা হবে।
ভার্চুয়াল বৈঠকে গণভবন থেকে একনেক সভায় সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপাসন শেখ হাসিনা। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান উপস্থিত থাকবেন।
অন্যদিকে শেরে বাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-সচিবগণ উপস্থিত থাকবেন। একনেক সভায় করোনা সংকট মোকাবেলা সংক্রান্ত প্রকল্প ছাড়াও অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বেশকিছু প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হবে। একনেক বৈঠকে প্রকল্প উপস্থাপনের জন্য তালিকা চূড়ান্ত করা হবে রোববার (৩১ মে)।
শুক্রবার (২৯ মে) পরিকল্পনা সচিব মো. নূরুল আমিন বলেন, ‘কোভিড ১৯ এর কারণে ভার্চুয়ালভাবে প্রথমবারের মতো একনেক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২ জুন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী গণভবন থেকে একনেক সভায় অংশ নেবেন। অন্যরা এনইসি থেকে সভায় অংশ নেবেন।’
ইসলামিক ফাউণ্ডেশন সূত্র জানায়, মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পটি সরকারের বিশেষ বিবেচনায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সপ্তম পর্যায়ে প্রকল্প পেতে যাচ্ছে। নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় হবে তিন হাজার ১২৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। জুন ২০২০ থেকে ডিসেম্বর ২০২৪ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জেলা ও উপজেলা শিক্ষাকেন্দ্র, দারুল আরকাম মাদ্রাসা এবং রিসোর্স সেন্টারের কাযর্ক্রম চলমান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ৬৪টি জেলা, ৫০৫টি উপজেলা, থানা ও জোনে চলমান। ৩২ হাজার প্রাক-প্রাথমিক, ৪১ হাজার কুরআন শিক্ষা এবং ৭৬৮টি বয়স্ক কেন্দ্রেসহ মোট ৭৩ হাজার ৭৬৮টি শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে শিক্ষকদের মাসে সাড়ে চার হাজার টাকা বেতন দেওয়া হচ্ছে। সামনে তা বাড়িয়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা করা হবে। প্রাক-প্রাথমিক, সহজ কুরআন শিক্ষা ও বয়স্ক শিক্ষাস্তরসহ মোট এক কোটি ১৮ লক্ষ ৯৩ হাজার ৯৫০ জনকে শিক্ষা দান করা হয়েছে।
আগ্রহী আলেমদের জন্য দ্বিনী দাওয়াতভিত্তিক কর্মসংস্থান এবং স্বাক্ষরতা হার আরো বৃদ্ধির জন্য নতুনভাবে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড ইমার্জেন্সি অ্যাসিসট্যান্স প্রকল্প একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সাড়ে তিন হাজার ডাক্তার ও নার্সকে আধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। প্রশিক্ষণের তালিকায় আছেন স্টাফরাও। পাশাপাশি যেসব হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভেন্টিলেটর স্থাপন করা হবে। ১৭টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৭টি আইসোলেশন সেন্টার ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটসহ ১৯টি ল্যাবরেটরি আপগ্রেড করা হবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় এক হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ কোটি ডলার দেবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বাকি অর্থ সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হবে।
এছাড়া ‘কোভিড-১৯ ইর্মাজেন্সি রেসপন্ড অ্যান্ড প্যানডেমিক রেসপন্স’ নামে এক হাজার ৩৬৫ কোটি টাকার আরেকটি প্রকল্প উপস্থাপন করা হবে একনেকে। এই প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ৮৫০ কোটি টাকা আসছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ থেকে, বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে।
প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৭টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা ইউনিট দিয়ে সজ্জিত করা, কমপক্ষে ১৯টি পরীক্ষাগারের সক্ষমতা ও গুণগত মানকে কোভিড-১৯ মাইক্রোবায়োালজিক্যাল ডায়াগনস্টিক সুবিধা দিয়ে উন্নত করা হচ্ছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য খাতের কমপক্ষে তিন হাজার ৫০০ জন কর্মীকে আধুনিক দক্ষতা এবং জ্ঞানের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে পিসিআর মেশিন, পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ, পিপিই ও মাস্ক কেনার কাজে এই প্রকল্পের টাকা খরচ করা হচ্ছে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য ‘প্রাথমিক উপবৃত্তি (তৃতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পটির সংশোধনী বাস্তবায়নে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১৩ হাজার কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বকেয়া অর্থ পরিশোধে জরুরি বিবেচনায় প্রকল্পটি একনেক সভায় উঠছে প্রকল্পের আওতায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উপবৃত্তির টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে এবারই প্রথম জুতা, জামা ও স্কুল ব্যাগ কিনতে সব শ্রেণির জন্য এককালীন এক হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।