ডেস্ক: মানিকগঞ্জের ঘিওর-দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলার সর্বত্রই চলছে এমপি স্বজনদের বেপরোয়া দখলবাজি। তাদের আগ্রাসী থাবা থেকে সরকারি সম্পত্তি, খাস জমি, খাল-বিল এমনকি ব্যক্তি মালিকানার জায়গা জমি, ভিটে মাটি কোনো কিছুই রেহাই পাচ্ছে না। কোথাও তা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই নিয়ে নিচ্ছে আবার কোথাও কোথাও সে দখলবাজির জমি পজেশন আকারে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র মূল্যবান জায়গা, সড়ক ও জনপথের জমি, নদীভাঙ্গা সম্পদ, হাট-বাজারের খাস জমির সবকিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন এমপি দুর্জয়ের চাচা টিপু।
তাছাড়া তরা-মুলজান শিল্পাঞ্চলের অনেক জায়গা জমি হাতিয়ে নেয়া হয়েছে এমপি দুর্জয় পত্নী ফারহানা রহমান হ্যাপীর নামেও।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে জানিয়েছেন, কোথাও একচিলতে জমিও নির্বিঘ্নে রাখার উপায় নেই, সবখানেই দখলবাজদের শ্যেণ দৃষ্টি পড়ছে। দলবল নিয়ে তারা হামলে পড়ছে যখন তখন, তারা সে জায়গা দখল করে নিজেদের কব্জায় নিয়ে নিচ্ছে।
ভূমি অফিস ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ৫/৬ বছরে শুধু দৌলতপুর এলাকাতেই শতাধিক একর খাস জমি বেহাত হয়ে গেছে। উপজেলা সদরের খাল-নালা ভরাট করে তা পজেশন আকারে বিক্রি করার ঘটনাও ঘটেছে।
সরকারি এসব জায়গা দখলবাজির মাধ্যমে এমপি’র স্বজনরা কমবেশি আড়াই কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। সেখানে এমপির চাচা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তায়েবুর রহমান টিপুর নেতৃত্বেই বেশিরভাগ জমি জবর দখলের ঘটনা ঘটেছে।
দৌলতপুর বাজারে জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই সরকারি নালা দখল করে ভরাট হয়েছে, সেখানেই এখন গড়ে উঠেছে বড় আকারের মার্কেট। দোকান প্রতি ৫/৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে পজেশন বরাদ্দও দিয়েছেন টিপু।
একইভাবে আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় বিআইডব্লিউটিএ’র কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা দখল করে নিয়েছে টিপুর বাহিনী। সেখানে এখন শতাধিক দোকানপাটের জন্য পজেশন বরাদ্দের পাঁয়তারা চলছে।
এদিকে এমপি দুর্জয় পত্নীর নামে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সড়ক ও জনপথের বহুদামি জায়গা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তরা ক্রসব্রিজ থেকে মানিকগঞ্জ সদর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কের অন্তত চারটি পয়েন্টে অন্তত পাঁচ একর জায়গা দখল করা হয়েছে। সেসব স্থান কাটাতারের বেড়া দিয়ে আলাদা সীমানা করে দেয়া আছে।
জবর দখলকৃত জায়গা এমপি পত্নী হ্যাপীর কব্জায় থাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগ সেখানে কোনো উচ্ছেদ অভিযান চালাতেও সাহস পাচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-পাটুরিয়া মহাসড়কের মেগা ফিড কারখানার পেছনে অন্তত তিনটি স্পটে ফসলি জমি দখল করে সেখান থেকে দেদারছে মাটি বিক্রি করে চলছেন হ্যাপী। প্রতিদিন ১৫-২০টি মাটিবাহী ট্রাকযোগে সে মাটি সরবরাহ করা হচ্ছে ইটভাটাসমূহে। তাছাড়া ফসলি জমির ওপর দিয়ে রাস্তা বানিয়ে জোরপূর্বক মাটির ট্রাক যাতায়াত করছে তার বেলতা, জমদুয়ারা, কৃষ্ণপুর, বিলপাড়া, উথুলী, বাড়াদিয়া, আড়পাড়া, আমডালা, উলাইল, ফলসাটিয়া, মানিকনগর, বুতুনী, ঢাকাইজোড়া, নয়াবাড়ি, পয়লাসহ অর্ধশতাধিক স্পট থেকে। সেসব জমিও হ্যাপীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানা গেছে।
মুলজান এলাকায় সড়ক ও জনপথের দখলকৃত জায়গার উপরেই হ্যাপীর নামে বড় আকারের শপিংমল নির্মাণেরও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব অপকর্মে বাধা দেয়ার সাহস নেই কারো।
জাফরগঞ্জ নৌবন্দর সংলগ্ন যেসব জায়গা জমি কয়েক বছর আগে যমুনাগর্ভে বিলিন হয়েছিল অদৃশ্য কাগজপত্রের সাহায্যে সেসব জায়গার মালিক সেজেছেন এপির চাচা টিপু। স্ট্যাম্পে লিখিত দেয়ার মাধ্যমেই নদীর সেই জায়গা বেচাকেনাও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এসব ব্যাপারে বারবার যোগাযোগ করেও এমপি দুর্জয় পত্নী ফারহানা রহমান হ্যাপীর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এমপির চাচা তায়েবুর রহমান টিপু বলেছেন, জমি দখলবাজির সব অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন। দৌলতপুর ও জাফরগঞ্জ এলাকায় জায়গা জমি দখল করার প্রশ্নই উঠে না। আরিচা ও পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় কিছু জায়গা জমি নিয়ে দলীয় কর্মীদের মধ্যে বিরোধ ছিল, আমি মধ্যস্থতা করে সেসব ঝামেলা মিটিয়ে দিয়েছি কেবল।
এক প্রশ্নের জবাবে টিপু বলেন, মুলজান এলাকায় ক্রয়কৃত সম্পত্তির উপর এমপি পত্নী বাড়ি, মার্কেট, খেলার মাঠ যা খুশি করতে পারেন সেসব নিয়ে কারো মাথা ব্যাথার কারণ দেখি না।
সূত্র: দিকদর্শন