নিজস্ব প্রতিবেদক: চাকরির আশ্বাসে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কাছ থেকে নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন হাতিয়ে নিয়েছিল প্রতারক সিকদার লিটন। এভাবে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন প্রতারণা। এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়িত না লিটন।
চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও প্রাণনাশের হুমকি, সাইবার অপরাধসহ প্রায় ডজনখানেক মামলার আসামি লিটন দিনে দিনে হয়ে উঠেছেন ভয়ঙ্কর প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে গেছেন অন্য মাত্রায়।
মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম মিয়া বলেন,
বেশকিছু দিন আগের ঘটনা। তখন আমার মেয়ের নতুন বিয়ে হয়েছে। জামাইসহ থাকত ঢাকার সাভারে। জামাই বেকার ছিল। হঠাৎ একদিন সিকদার লিটন ওদের বাসায় যায়। লিটন বলে, ভাই (জামাইকে) আপনার তো চাকরি-বাকরি নেই বেকার মানুষ দেখি একটি চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে পারি কি-না।’
‘এতে জামাই লিটনের কথায় আশ্বস্ত হয়। এসময় লিটন চাকরির জন্য কিছু টাকা দাবি করে। কথা অনুযায়ী টাকাও দেওয়া হয়।’
মুক্তিযোদ্ধা হালিম মিয়া আরো বলেন, ‘টাকা নেবার পর প্রতারক লিটন আমার জামাইকে বলে- দেখি ভাই আপনার মোবাইলটা একটু দেন। চাকরির খবর নিই। এই বলে মোবাইল নিয়ে বাইরে কথা বলতে বলতে বের হয়ে আসে। এরপর কোনদিন টাকা বা মোবাইল ফেরত তো দেইনি চাকরিরও কোন ব্যবস্থা হয়নি।’
হালিম মিয়া বলেন, ‘এরপর আমি যখন চেয়ারম্যান নির্বাচন করলাম তখন ও (লিটন) আসলো। আমার সঙ্গে ৭-৮ দিন থাকলো। এরপর চলে গেল। টাকা চাওয়ার পরেও আর টাকা দেয়নি। এরপর থেকেই তো ফেরারি।’
এদিকে প্রতারক সিকদার লিটনের আরেক প্রতিবেশি সামীম শেখ বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির কথা বলে লিটন অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। সে এলাকায় চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত ছিলো। স্থানীয়রা একদিন ক্ষিপ্ত হয়ে জোড়া মান্দার গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখে। পরে মুরব্বিদের হাতে পায়ে ধরে রক্ষা পায়। এরপর থেকে এলাকা ছাড়া। কিন্তু তারপরেও দমেনি। এখনো বিভিন্ন জায়গায় শোনা যায় তার প্রতারণার গল্প।’
মুক্তিযোদ্ধা আ. হালিম মিয়া ও সামীম শেখ দুজনই সিকদার লিটনের প্রতিবেশি। তাদের বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামে। পাশের বাড়ির প্রতিবেশি হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই চেনেন প্রতারক লিটনকে।
আর স্থানীয়দের কাছেও তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশি অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত।
প্রতিবেশি সামীম শেখ বলেন, ‘এলাকা থেকে বিতারিত হবার পর পাবনা, খুলনা, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জায়গা অবস্থান করেছে এই প্রতারক। সেখানেও মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এত অত্যাচার আল্লাহ সহ্য করলেও মানুষ সহ্য করে কেমন করে?’
‘কিছুদিন আগে নড়াইল থেকে একজন মহিলা এসে কান্নাকাটি করছিল। পরে জানতে পেরেছি লিটন তাকে বিদেশ পাঠানোর কথা বলে এক লাখ বিশ হাজার টাকা নিয়েছে। এমন অনেক খারাপ কাজে জড়িত লিটন।’
সামীম বলেন, স্থানীয় অনেক ছিনতাই, ডাকাতির ঘটনায় লিটন জড়িত। আবার মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার ঘটনায় অনেকে এখনো তার বাড়িতে আসে। বাবা-মা মারা যাবার পরেও দাফন করতে এলাকায় আসতে পারেনি।’
বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরির আশ্বাস:
২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে আলফাডাঙ্গার এক যুবকের কাছ থেকে দুই লাখ টাকা নেয় প্রতারক লিটন। আড়াইবছরে চাকরি তো দুরের কথা টাকাও ফেরৎ পাননি নাজমুল নামে এই ভুক্তভোগী। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন ধর্ণা দিলেও এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। গরু বিক্রি ও কিছু জমি বন্ধুক রেখে লিটনের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন নাজমুল। বর্তমানে অসহায় হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন এই যুবক।
এদিকে সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিকদারের লিটনের প্রতারণার খবর প্রকাশের পর রাজনৈতিক বিভিন্ন নেতাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাজে মন্তব্য করে পোস্ট দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিপুর-১ আসনের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম আকরাম হোসেনকে নিয়ে ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও সম্মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগ আছে লিটন ও তার ইন্ধনদাতাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ২০১৯ সালের ২ ডিসেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন আকরাম হোসেন। যার নং- ৯৬। ফেসবুকে অসত্য ও মানহানিকর তথ্য প্রচারের অভিযোগে আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি এনায়েত হোসেনও সিকদার লিটনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। এই দুটো অভিযোগ তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতির অপেক্ষায় আছে পুলিশ।
ভয়ঙ্কর এই প্রতারককে গ্রেপ্তারের অগ্রগতি জানতে আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) রেজাউল করিমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।