নিজস্ব প্রতিবেদক: বিয়ের প্রলোভনে ঢাকা থেকে এক তরুনীকে নড়াইলের লোহাগড়ায় নিয়ে আসে সিকদার লিটন। স্ত্রী পরিচয়ে সেখানে বসবাসও শুরু করে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর মেয়েটির পরিবার জানতে পারে সে লোহাগড়ায় আছে। তখন পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করা হয়। আটক হয় লিটন। তরুনীর পরিবারের অনেক সম্পত্তি ছিল। সেই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতেই লিটন তরুনীর সঙ্গে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিল। কথাগুলো বলছিলেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার টগরবন্দ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন। স্থানীয় এই নেতা বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে লিটন অবৈধভাবে ঢাকা থেকে একটা মেয়ে লোহাগড়ায় আনে। স্ত্রী পরিচয়ে একটি বাসাতে থাকত। মেয়েপক্ষ সন্ধান নিয়ে জানতে পারে প্রতারক লিটন তাদের মেয়েকে নিয়ে লোহাগড়ায় উঠেছে। তারা এলাকার লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওখান থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে এবং লিটনকে পুলিশ হেফাজতে দেয়। কিছুদিন পর ছাড়া পেলেও ওই বাসায় নিজের মালামাল আনতে যেতে সাহস পায়নি লিটন। আমার কাছে মালামাল উদ্ধারে বেশ কয়েকবার ধর্ণা দিয়েছিল। তখন আমি তাকে বলেছিলাম- `তুমি যে উল্টোপাল্টা কাজ করেছো, তাতে আমার দ্বারা তোমার এসব উদ্ধার করে দেওয়া সম্ভব না। আর এসব কাজ নিয়ে মানুষের কাছে যাওয়ায় সম্ভব না।‘ তিনি বলেন, প্রতারণার ফাঁদে ফেলতেই লিটন ওই নারীকে ঢাকা থেকে এনেছিল। সে বেশকয়েকজন নারীর সঙ্গে এই ধরণের আচরণ করেছে। আর চাকরির আশ্বাসে তো অনেকের কাছ থেকেই সে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিকদার লিটন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের সিদ্দিক শিকদারের ছেলে। স্থানীয়দের কাছে তিনি প্রতারক ও ছদ্মবেশী অপরাধী বলেই বেশি পরিচিত। এলাকার মানুষকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চাঁদাবাজি, প্রতারণা, সাইবার অপরাধসহ এক ডজনের মতো মামলার আসামি লিটন। তার পেছনে কারা কাজ করছে তা খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সিকদার লিটনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারই প্রতিবেশি একজন নারী। আঞ্জিরা বেগম নামে এই নারী বলেন, হঠাতই একদিন লিটন আমার কাছে একলাখ টাকা দাবি করে। টাকা কেনো দিবো প্রশ্ন করলে সে বলে- টাকা না দিলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করব। তখন আমি বলি, প্রয়োজনে থানা-পুলিশকে টাকা দিবো কিন্তু তোমাকে দিবো না! এর ক’দিন পরেই লিটন আমাকে বাড়ির পাশে বিল্লালের দোকানের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর ধারালো রাম-দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা করি। লিটন গ্রেপ্তার হলে আদালত তাকে সাতদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। জেল থেকে বেরিয়ে আমাকে আবারো হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। লিটন অনেকের সঙ্গেই প্রতারণা করেছে। কিন্তু থানা-পুলিশ কেন তাকে ধরে না, আমি জানি না। দু:খের বিষয়, এখন আপনাদের কাছে আমি সঠিক বিচার চাই। আঞ্জিরা বেগম বলেন, লিটনের বাবা মরেছে। মা মরেছে। কিন্তু সে এলাকায় এসে মাটি দিতে পারেনি। বর্তমানে বিভিন্ন মামলার পলাতক আসামী সে। তার বিরুদ্ধে মামলার কাগজ আসে কিন্তু সে এলাকায় থাকে না। পলাতক থাকার কারণে আদালত তার মালামাল ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছিল। বেশ কয়েকবার পুলিশও এসেছিল। স্থানীয় জাপান মুন্সীর মেয়েকে বিয়ে করার পর লিটন তাকেও (জাপান মুন্সী) পাঁচলাখ টাকার মিথ্যা মামলা দেয়। তাছাড়া বাজরা গ্রামের অনেক অসহায়দের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে প্রতারক লিটন। তিনি বলেন, `চাকরি দেওয়ার নামে লিটন অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। টাকার জন্য অপহরণ করেছে। চুরি-ডাকাতি, বদমায়েশি, ছিনতাই এমন কিছু বাকি নেই যা করেনি। পাওনাদারদের তাড়নায় লিটন উধাও হয়ে গেছে। তবে বাংলাদেশেই তো আছে, কিন্তু থানা-পুলিশ তাকে ধরে না। আপনারা বিষয়টি তুলে ধরেন।‘ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন- বিআইডব্লিউটিসিতে চাকরি দেয়ার আশ্বাসে দুই লাখ টাকা নেয় প্রতারক সিকদার লিটন। দুই বছরেও চাকরি কিংবা টাকা কিছুই ফেরত পাননি ভুক্তভোগী নাজমুল। টাকা চেয়ে দীর্ঘদিন প্রতারক লিটনের কাছে ধরনা দিলেও টাকা তো দুরে থাক এখন উল্টো হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। ভুক্তভোগী নাজমুল গরু বিক্রি ও জমি বন্ধক রেখে লিটনকে টাকা দেয়। আলফাডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, `প্রতারক লিটনের বিরুদ্ধে আমাদের থানার সাতটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আমরা তাকে ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।‘