নিজস্ব প্রতিবেদক: চাঁদাবাজির মামলায় গ্রেপ্তার আসামির ভিডিও নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলায়। আসামি নিজেই তার ফেসবুকে ভিডিওটি প্রকাশ করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদাবাজির মামলায় গত ৫ জানুয়ারি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আরাফাত। ওই সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তার কথা হয়। কে বা কারা সেই কথোপকথন ভিডিও করে। শেখ আরাফাত সেই ভিডিওটি হঠাৎ করে গত ২১ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক পেইজে পোস্ট করেন এবং দ্রুত তা ছড়িয়ে দেন। কোনো কারণ ছাড়া কেন হঠাৎ আসামি নিজেই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আনলেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। অভিযোগ উঠেছে, রাজনৈতিক শক্তপ্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে এই ভিডিওকে অপকৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে শেখ আরাফাতসহ তার রাজনৈতিক সহচররা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর কাজী জাফরউল্যাহর অনুসারী ও তার নিকটাত্মীয় ভাঙ্গা থানা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ আরাফাত দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে ভাঙ্গা উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়ন যুবলীগের তৎকালীন সভাপতি মো. মামুনকে মারপিট করেন। মামুনও কাজী জাফরউল্যার পক্ষের অনুসারী। এই ঘটনায় মামুন বাদি হয়ে শেখ আরাফাতের বিরুদ্ধে থানায় চাঁদাবাজি ও মারপিটের অভিযোগ দায়ের করে। এর প্রেক্ষিতে ভাঙ্গা থানা পুলিশ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহায়তায় আরাফাতকে গ্রেপ্তার করে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও স্থানীয় প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পুলিশ ওই রাতেই আরাফাতকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে আসে। সেখানে আরাফাত ও একজন পুলিশ কর্মকর্তার কথোপকথন কে বা কারা ভিডিও ধারণ করে। যা পরে আরাফাতের হাতে আসলে সেটি তিনি তার ফেসবুকে আপলোড করে ছড়িয়ে দেন। ভিডিওতে দেখা যায়, হাতকড়া পরা অবস্থায় অন্য একটি রুম থেকে ওই পুলিশ কর্মকর্তার সামনে আরাফাতকে আনা হয়। এসময় আরাফাত কাঁদতে থাকলে ওই কর্মকর্তা তাকে জিজ্ঞাস করেন, ‘তুই কাঁদছিস কেন, তোকে কেউ মারছে? আমি কি তোকে মারছি ?’ এক পর্যায়ে আরাফাত ওই কর্মকর্তাকে বলেন, ‘আপনি তো আমার শশুরের লোক (আরাফাত কাজী জাফরউল্যাহর ভাইয়ের মেয়ে জামাই)। তখন এর প্রতি উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি তোদের লোক হলে তো থানায়ই থাকতাম, আমি তো নিক্সনের লোক।’ ভাঙ্গা থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগ নেতা শেখ আরাফাতের বিরুদ্ধে নয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলাও রয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৯মাস আগের একটি ঘটনার ভিডিও উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে ফরিদপুর-৪ আসনের তরুণ সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কাছ থেকেই খবর পেয়ে আমি ভিডিওটি দেখলাম। ভিডিওটিতে স্পষ্ট দেখা ও শোনা যাচ্ছে আরাফাত পুলিশ কর্মকর্তাকে বলছে আপনি তো আমার শশুরের লোক। শশুরের লোক বলতে আরাফাত কাজী জাফরউল্যাহ সাহেবকেই বুঝিয়েছেন। কারণ আরাফাত কাজী জাফরউল্যাহর চাচাতো ভাই কাজী রওশনের মেয়েকে বিয়ে করেছেন। এর উত্তরে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেছে, না আমি তোদের লোক হলে তো থানাতেই থাকতে পারতাম। আমি তো নিক্সনের লোক।’ সংসদ সদস্য নিক্সন বলেন, ‘মূলত ওই পুলিশ কর্মকর্তা কাজী জাফরউল্যাহর সুপারিশে ভাঙ্গা থানায় জয়েন করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সেটি না হওয়াতে ক্ষোভের প্রকাশ হিসেবে আমার নাম বলেছেন। তিনি আরো বলেন, ‘আরাফাত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ধরনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ নয়টি মামলা রয়েছে। নয় মাস আগের এই ঘটনার ভিডিও দিয়ে শুধু মাত্র আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ তরুণ সাংসদ নিক্সন আরো বলেন, ‘কাজী জাফরউল্যাহ দুইবার আমার বিরুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। তিনি রাজনীতিতে এখন দেউলিয়া। তার নেতাকর্মীরা সব আমার সাথে যোগ দিচ্ছে। এখন এই ভিডিওকে পুঁজি করে তিনি আমার রাজনৈতিক সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মূলত ওই ঘটনায় যে অভিযোগ করেছে(মামুন), আর যে আটক হয়েছে(আরাফাত) দুইজনই কাজী জাফউল্যাহর সমর্থক। এই মামলা ও আটকের বিষয়টি আমার জানাই ছিল না। এখন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসার পরে ও কয়েকটি মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পরে আমি পুরো ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে জানলাম। এদিকে ওই ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল পাশাকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তদন্ত কমিটির প্রধান জামাল পাশা বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠনের চিঠি হাতে পেয়েছি। আমরা ইতিমধ্যে তদন্তের কাজ শুরু করেছি। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’