নিউজ ডেস্ক: অফিসে সহকর্মীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কাজকে অর্থবহ এবং কার্যকরী করে তোলে। কাজের পরিবেশ ও মনমানসিকতা ভালো রাখে। কিন্তু এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মাঝে মাঝে খোশগল্পে পরিণত হয়। অনেক সময় এই খোশগল্পের সঠিক ব্যবহার না হওয়ার ফলে বড় ধরনের বিপত্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে।
অভিজ্ঞরা মনে করেন, সহকর্মীদের মধ্যে উষ্ণ সম্পর্ক থাকাটা ইতিবাচক। কিন্তু এরও একটা সীমা নির্ধারণ থাকা ভালো। কারণ সহকর্মীদের সঙ্গে কিছু বিষয়ে কথাবার্তা আপনাকে অপেশাদার বা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে। শিষ্টাচার ও ভদ্রতা বিশেষজ্ঞ রোসালিন্ডা ওরোপেজা র্যা ন্ডাল বলেন, কথোপকথনের সময় কিছুটা সাধারণ বুদ্ধি এবং দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনা করে কথা বলতে হয়, বিশেষ করে যখন অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হয়।
অফিসে অস্বাভাবিক পরিস্থিতি এবং সমালোচনা ও নিন্দার হাত থেকে রক্ষা পেতে কিছু কথা কখনোই সহকর্মীদের সঙ্গে বলা উচিত নয়। এ নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।
স্যালারি নিয়ে প্রশ্ন করবেন না: ‘আপনি কত স্যালারি পান’- এই প্রশ্ন করাটা শুধু অপ্রাসঙ্গিক নয়, বরং বেকামিও বটে। আরেকজনের কত স্যালারি এটা আপনার জানার প্রয়োজন কেন? আপনি কি তা জেনে আপনার সঙ্গে কোনো অসামঞ্জস্য হলে উর্ধ্বতন বস বা মালিকপক্ষকে অভিযোগ করবেন বা করতে পারবেন? অথবা এমনকি হবে যে আপনার চেয়ে কম স্যালারি পায় তার পক্ষে আপনার বসের কাছে স্যালারি বাড়ানোর সুপারিশ করবেন?
ধার চাইবেন না: অনেকে দেখা যায় অফিসে ২/১ দিন ম্যানিব্যাগ বা টাকা আনতে ভুলে যান। এটা স্বাভাবিক বিষয়, এমনটা হতেই পারে। এমন হলে ২/১ দিন আপনার শুভাকাক্সক্ষী বা ভালো সম্পর্কের সহকর্মীদের থেকে টাকা ধার নিয়ে খরচ করাটা স্বাভাবিক হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি এটাকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেন, তাহলে ভবিষ্যতে সহকর্মীরা আপনাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করলে অবাক হবেন না।
গুজব রটাবেন না: খোশগল্প করা এবং গল্প ছড়ানোর জন্য অফিসে আপনার নাম হয়ে যেতে পারে ‘গল্প গসিপ’। তাই অযথা বিষয়ে গল্প করা থেকে বিরত থাকুন। শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ র্যা ন্ডাল বলেন, আপনি যখন আরেকজন সহকর্মী সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করবেন তখন অন্যের কাছে আপনিও খারাপ হতে পারেন। তাই কারো সম্পর্কে নীতিবাচক কিছু দেখলে সরাসরি তার সঙ্গেই বিষয়টা নিয়ে আলাপ করাই উত্তম।
নারী সহকর্মীকে টাইট পোশাকে সুন্দর দেখাচ্ছে বলবেন না: প্রশংসা করা আইনের পরিপন্থী নয়। কিন্তু আপনি কী বিষয়ে প্রশংসা করছেন তা বিবেচনার বিষয়। সহকর্মীদের শারীরিক বিষয়ে প্রশংসা করা পেশাগত কোনো কাজ নয়, বরং অনেকক্ষেত্রে সেটা খারাপ এমনকি যৌন হয়রানির মতোও মনে হতে পারে।
আপনার উচ্চ বিলাসী জীবনযাপনের কথা বলবেন না: আপনার বিলাসবহুল জীবনের কথা স্বগর্বে সহকর্মীদের সঙ্গে শেয়ার করাটা অন্যদের ঈর্ষাকে বাড়িতে দিতে পারে। তাই সাধারণভাবে উচিত আপনার জীবন কেমন উন্নত তা নিয়ে আস্ফালন না করা। আপনি কীভাবে ভালো জীবনযাপন করছেন তা অন্যের সঙ্গে আলাপ না করাই উত্তম।
নারী সহকর্মীকে প্রেগনেন্ট কিনা প্রশ্ন করা: আপনি আপনার নারী সহকর্মীকে প্রেগন্যান্ট কিনা বিষয়ে প্রশ্ন করলে খুব কমই সময়ই ইতিবাচক ফলাফল পেতে পারেন। যদি সে প্রেগনেন্ট না হয় তাহলে আপনি তাকে অপমান বা বিব্রত করছেন বলে প্রতীয়মান হয়। শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ অলিভার বলেন, সে যদি প্রেগন্যান্টও হয় তবুও সে হয়তো তা গোপন রাখার চেষ্টা করে। তাই এসব প্রশ্ন না করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
আপনি অন্য কোথাও চাকরি খুঁজছেন বা অন্যকেউ আপনাকে নিতে আগ্রহী: শিষ্টাচার বিশেষজ্ঞ রান্ডাল বলেন, সহকর্মীদের সঙ্গে এসব বিষয় শেয়ার করলে তা তাদের সঙ্গে আপনার একটি অনিচ্ছাকৃত দূরত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে। তারা হয়তো মনে করবে যে, আপনি তাদের দলে আর বেশিদিন থাকছেন না। তারা অনিচ্ছাকৃতভাবে আপনার এই গোপন তথ্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে শেয়ার করে ফেলতে পারেন। যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য অমঙ্গল কিছুও বয়ে নিয়ে আসতে পারে।
প্রতিটি কথায় ‘আমার মনে হয়’ বলা: ‘আমার মনে হয়’ কথাটি মাঝে মাঝে গ্রহণযোগ্য কিন্তু কেবলমাত্র অনিশ্চিত বিষয়ে। কিন্তু সব ব্যাপারে ‘আমার মনে হয়’ টাইপের কথাবার্তা আপনার ব্যক্তিত্বকে হালকা করে তুলতে পারে।
আপনাকে দাওয়াত দেয়া হয়েছে এমন কোনো অনুষ্ঠানে কেউ যাচ্ছে কিনা তা জানতে চাওয়া: একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে, সকল প্রোগ্রামে সবাইকে দাওয়াত নাও দেয়া হতে পারে। তাছাড়া এমন প্রশ্নের উত্তর শোনার জন্য আপনি কি প্রস্তুত?
সহকর্মীকে সুনাম ছিনতাইকারী বলবেন না: হতে পারে আপনার সহকর্মী বা আপনার বস আপনার কাজের কৃতিত্ব নিজে নিয়ে নিচ্ছেন, কিন্তু এ বিষয়ে অন্যান্য কলিগদের কাছে বললে খুব কমই ভালো পরামর্শ বা সহায়তা পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে যে আপনার কৃতিত্ব নিজের করে নিচ্ছে তার সঙ্গে বিষয়টা খোলামেলা আলাপ করা।
অফিসের বসকে যেসব কথা বলা উচিত নয়: বসের সঙ্গে কথা বলার সময় পেশাগত ব্যাপারটি আপনার খেয়াল রাখা উচিত। ভুল কিছু বলে ফেললে আপনার চাকরির ক্ষতি হতে সময় লাগবে না। আজ সে রকম ৯টি বিষয় তুলে ধরা হলো, যা আপনার অফিসের বসকে কখনো বলা উচিত নয়। নিজেকে বাঁচাতে অন্যের দোষ দেবেন না: অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দেয়া খুবই বাজে অভ্যাস এবং এটা অনেকটা শিশুসুলভ আচরণ। আপনি যদি নির্দোষ হন তাহলে সেটা আপনার বসকে বুঝিয়ে বলুন। তার মানে এই নয় যে, আপনি অন্যদের বলির পাঠা বানাবেন; যদি সেখানে সত্যিই আপনি দোষী হয়ে থাকেন। আপনার বস যদি দেখেন যে আপনি প্রায়শই কারো না কারো দিকে আঙুল তোলেন, তাহলে আপনার বস আপনার প্রতিই অসন্তুষ্ট হবেন।
আপনার ব্যস্ততা প্রকাশ করবেন না: বস আপনাকে কিছু করতে বললে সেটাকে ‘না’ বলা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। আপনি চরম ব্যস্ত থাকলে কোন কাজটা আগে করবেন সেটা আপনার বসের ওপর ছেড়ে দিন। তাতে করে আপনার বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ পাবে এবং আপনার বস আপনার ওপর খুশি থাকবেন।
পুরাতন বসের সঙ্গে নতুন বসের তুলনা করবেন না: আপনাকে যদি আপনার অবস্থানের পুরাতন কারো সঙ্গে তুলনা করে কোনো কথা বলা হয় তাহলে আপনার নিশ্চয় খারাপ লাগবে। আপনার বসের ব্যাপারটাও ঠিক তেমনই। উপরন্তু আপনার বস মনে করবেন আপনি নমনীয় নন, পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারেন না এবং পরিবর্তন পছন্দ করেন না। তাছাড়া আপনি যে জমাটবাধা বুদ্ধির মানুষ এটা তার বুঝতে বাকি থাকবে না। এর ফলে নিত্যনতুন কাজ আপনার হাতছাড়া হয়ে যাবে কেননা আপনার বসের ধারণা আপনি হাওয়া পাল্টালে নিজে পাল্টাতে পারেন না।
নতুন চাকরি খোঁজার কথা বলবেন না: অফিসের সকল কর্মীই জানেন একটা সময় পরে তাদের কোনো সহকর্মী নতুন চাকরি খুঁজবে। কিন্তু এই ব্যপারটা আপনার সহকর্মীদের এবং বসের জানার মধ্যে ঢের পার্থক্য আছে। আপনার বস যদি জানতে পারেন যে আপনি মনেপ্রাণে নতুন চাকরিতে যোগ দেয়ার চেষ্টা করছেন তাহলে এটা তার গালে থাপ্পর মারার মতো হবে। নতুন চাকরি পাওয়ায় পর ২ সপ্তাহের নোটিশ দিয়ে তাকে অবগত করা এক্ষেত্রে উত্তম।
কাজে অপারগতার কথা বলবেন না: আপনার বস আপনাকে কোনো কাজ করতে বললে আপনি যদি সত্যিই না জানেন তা কিভাবে করতে হয় তাহলে সেটা তার মুখের ওপর কখনো বলবেন না।
আপনি আপনার বসকে শুরুটা কিভাবে করবেন সেটা জিজ্ঞেস করতে পারেন অথবা কোনো সহকর্মী বা ইন্টারনেট থেকে শিখে নিয়ে কাজ করতে পারেন। এর ফলে আপনার বস খুশি হবেন এবং মনে করবেন যে, আপনার মধ্যে একগুঁয়েমি কম এবং আপনি শিখতে আগ্রহী।
বেতন বাড়ানোর কথা বসকে বলবেন না: এমন নয় যে বসের সঙ্গে টাকাপয়সা নিয়ে আপনি কথাই বলবেন না। তবে বেতন নিয়ে দরাদরি এবং ব্যক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে বেতন বাড়ানোর কথা বলবেন না। এতে আপনার বস কোনোরকম প্রভাবিত হবেন না। বেতন বাড়ানোর কথা বসকে বলতে গেলে অফিসে আপনার কাজ, আপনার অর্জনগুলো, আপনার কর্মদক্ষতা নিয়ে কথা বলুন।
কাজ নাই বলে বের হওয়ার কথা বলবেন না: সত্যিই যদি আপনার কোনো সমস্যা থেকে থাকে সেটা এক ব্যাপার। যেমন: ডাক্তার দেখানো। কিন্তু অফিসে কোনো কাজ নেই বলে বসকে কখনও চলে যাওয়ার কথা বলতে যাবেন না। যে সকল কর্মীরা নতুন নতুন কাজে উৎসাহী হয় তাদেরকে বস অনেক পছন্দ করেন। সুতরাং অফিসে কোনো কাজ না থাকলে নতুন নতুন কাজ সম্বন্ধে খোঁজ নিন।
বিষন্নতা বা ক্লান্তির কথা বলবেন না: বসের খুব কাছের মানুষ হয়ে গেছেন এবং তার সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কও গড়ে উঠেছে আপনার। তার মানে এই নয় যে, কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা আপনি তাকে মন খুলে বলে দেবেন। আপনার ব্যক্তিগত ক্লান্তির কোনো স্থান সেখানে নেই কেননা আপনি বেতনভুক্ত কর্মচারী। দিনশেষে আপনার মনে রাখা উচিত যে, আপনার বসই একমাত্র ব্যক্তি যার মাধ্যমে আপনি বেতন, পদোন্নতি এবং বোনাস পেয়ে থাকেন।
সূত্র :রিডার্স ডাইজেস্ট