লাইফস্টাইল ডেস্ক : অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও যখনতখন খাওয়াদাওয়া শরীরে মেদ জমতে বড় ভূমিকা রাখে। প্রতিদিনের ব্যস্ততায় সুযোগ হয়না শরীরচর্চা করার। তার উপর অতিমারিতে দীর্ঘদিন ঘরে থেকে অনেকেরই বেড়ে গেছে ওজন। সে সাথে দিনকে দিন শরীরে বাড়ছে কোলেস্টরলের মাত্রা। এমন পরিস্থিতিতে সবাই কমবেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে ওঠেন। শুরু করেন ব্যায়াম। কিন্তু তার পরেও কমে না কোলেস্টরল। দুশ্চিন্তায় বিভ্রান্ত হোন, ছুটতে থাকেন চিকিৎসকের কাছে। তবে খুব সহজে কমাতে পারেন কোলেস্টরল। পরিচিত ৭টি পানীয় পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন। জেনে নিন সেগুলো কী কী।
গ্রিন টি : গ্রিন টি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের চমৎকার উৎস। গ্রিন টিতে আছে ক্যাটেচিনস এবং এ্যাপিগালোকেটিচিন গ্যালেটস। গ্রিন টি পান করলে এলডিএল এবং মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
টমেটো রস : টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে লাইকোপেন রয়েছে যা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে সুপরিচিত। টমেটো কোষের ক্ষতি রোধ করতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ২ মাসের জন্য প্রতিদিন ২৮০ মিলিলিটার টমেটোর রস পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।
সয়া দুধ : সয়া দুধে স্যাচুরেটেড ফ্যাট কম থাকে। ডায়েটের অংশ হিসাবে প্রতিদিন স্যাচুরেটেড ফ্যাট কমিয়ে তার পরিবর্তে ২৫ গ্রাম সয়া প্রোটিনযুক্ত দুধ রাখতে পারেন। সয়া দুধে রয়েছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, চর্বি, ভিটামিন বি১২, ক্যালসিয়াম, রিবোফ্লোবিন, ভিটামিন ডি এবং ফসফরাস। ১ কাপ বা ২৪০ মিলি সয়া দুধে রয়েছে ১০৫ ক্যালরি, ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৪ গ্রাম চর্বি। সয়া দুধ হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।
ওট দুধ : স্বাস্থ্যকর প্রাতরাশের তালিকার পৃথিবীর শীর্ষস্থানটি এখন ওটসের দখলে। ওট দুধ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে খুবই কার্যকরী। এতে রয়েছে বিটা-গ্লুকান নামক পদার্থ যা পিত্ত লবণের সঙ্গে মিশে যায় এবং অন্ত্রের মধ্যে একটি দেয়ালের মত স্তর তৈরি করে যা কোলেস্টেরলের শোষণ কমাতে সাহায্য করে। একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যেসব মানুষ টানা পাঁচ সপ্তাহ প্রতিদিন প্রায় ৭৫০ মিলিলিটার ওট দুধ পান করে, তাদের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমেছে ৩ শতাংশ এবং খারাপ কোলেস্টেরল, অর্থাৎ এলডিএলের মাত্রা কমেছে ৫ শতাংশ।
বেরি স্মুদি : বেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের সমৃদ্ধ উৎস এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ব্লুবেরি এবং ব্ল্যাকবেরির মতো অনেক বেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারে ভরপুর থাকে। প্রতিদিন লো-ফ্যাট দুধের সঙ্গে এক মুঠো বেরি কোলেস্টেরলের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে সাহায্য করে।
কোকো ড্রিঙ্ক : কোকোতে রয়েছে ফ্ল্যাভানল নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। ডার্ক চকলেটের মধ্যে প্রধান উপাদান হল কোকো, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা কোলেস্টেরলের মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে। সাধারণত, প্রতিদিন ৪৫০ মিলিগ্রাম কোকো কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রক্রিয়াকৃত চকলেটগুলি খাওয়া বন্ধ করা উচিত কারণ তাতে প্রচুর পরিমাণে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে।
নারকেল দুধ : নারকেলের ভেতরের সাদা অংশ থেকে দুধ বানানো হয়ে থাকে এবং ঘরেই এই দুধ বানানো সম্ভব। এ ছাড়া প্যাকেটেও কিনতে পাওয়া যায়। ১ কাপ অর্থাৎ ২৪০ মিলি নারকেলের দুধে রয়েছে ৪৬ ক্যালরি, ১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট ও ৪ গ্রাম চর্বি। প্রোটিন না থাকলেও অন্যান্য উদ্ভিজ্জ দুধের চেয়ে এতে চর্বির পরিমাণ অনেক বেশি। তবে এর মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড হৃদযন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। এই মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইড ফ্যাটি অ্যাসিড, রক্তে এইচডিএল, অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরল বাড়াতে সাহায্য করে।
সবশেষে যে পানীয়ের বিষয় না বললেই নয় সেটি হল বিশুদ্ধ পানি। প্রতিদিন অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার পানি শরীরের ডিটক্সিফিকেশন করতে সাহায্য করে এবং অনেক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। আর কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে যদি, ফাইবারযুক্ত খাওয়া বাড়িয়ে, স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া কমিয়ে, উদ্ভিদ ভিত্তিক খাবার যোগ করে, কম পরিশোধিত খাবার খাওয়া, প্রচুর পরিমানে ফ্লুইডস এবং খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাট কমানো যায়। শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলে একজন মানুষ দীর্ঘ এবং সুস্থ জীবন কাটাতে পারবে, জানিয়েছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞরা।