কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপমুখী অভিবাসী ঢল। প্রতিদিনই উদ্ধার হচ্ছে শত শত অভিবাসনপ্রত্যাশী। সোমবার (১৬ মে) লিবিয়া উপকূলে বেশ কয়েকটি নৌকা থেকে ৪৭০ জন অবৈধ অভিবাসীকে উদ্ধার করা হয়। বিপজ্জনক এ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে যৌন হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন অনেক নারী ও শিশু। খবর রিলিফ ওয়েবের।
একটু উন্নত জীবনের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অথই জলে ভাসছে শত শত মানুষ। ইউরোপের ছোট্ট দেশ মাল্টা যাওয়ার উদ্দেশে গত কয়েকদিন ধরে ভূমধ্যসাগরে রাবারের নৌকায় ভাসছিল প্রায় পাঁচশ’ অভিবাসনপ্রত্যাশী। প্রায় ৭২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে ৭টি নৌকা থেকে তাদের উদ্ধার করে স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী সংস্থা।
উদ্ধার করা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে। এর মধ্যে আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। অনেকেই নৌকার মধ্যেই যৌন হয়রানি ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানায় উদ্ধারকারী সংস্থা মেডিসিনস সানস ফ্রন্টায়ার্স।
ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে লিবিয়া থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা করা একটি যাত্রীবোঝাই নৌকা ডুবে অন্তত ৯৬ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস (এমএসএফ)।
সংস্থাটির বিবৃতি থেকে জানা যায়, শনিবার (২ এপ্রিল) ভোরে আলেগ্রিয়া-১ নামের একটি বাণিজ্যিক ট্যাংকার ভূমধ্যসাগরে ভাসতে থাকা একটি ভেলা থেকে চারজনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। জীবিতরা জানান, তারা কমপক্ষে একশ জনের সঙ্গে একটি নৌকায় ভ্রমণ করছিলেন। উদ্ধার হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা কমপক্ষে ৪ দিন সমুদ্রে ভাসছিলেন। আলেগ্রিয়া-১ ট্যাংকারের লগবুক অনুযায়ী এ নৌকাডুবির ঘটনায় অন্তত ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত এক দশকের সংঘাত ও অরাজকতায় জর্জরিত লিবিয়া এখন আফ্রিকান ও এশীয় অভিবাসীদের জন্য ইউরোপে পৌঁছানোর কেন্দ্রবিন্দু। লিবিয়া হয়েই অভিবাসনপ্রত্যাশীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যান। মূলত সমুদ্র পথে বিভিন্ন দেশে যান তারা। এসব অভিবাসী প্রায়ই লিবিয়ায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন।
লিবিয়া থেকে যাত্রার জন্য তাদের ছোট ছোট নৌকায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। যেগুলোর বেশির ভাগই অনিরাপদ। লিবিয়া থেকে সমুদ্রযাত্রায় অনুপযোগী ও যাত্রীবোঝাই জাহাজগুলো অধিকাংশ সময়ই ডুবে যায় কিংবা সমস্যায় পড়ে। আবার এসব অভিবাসী ফিরে আসার পর তাদের আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়, যেখানে তাদের ওপর চলে অমানুষিক নির্যাতন।
ইউরোপীয় উপকূলে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সংখ্যা কমাতে লিবিয়ার কোস্ট গার্ডের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কড়া সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এরপরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।
ইউএনএইচসিআর এক প্রতিবেদন বলছে ২০২১ সালে এ অঞ্চলে নৌকা ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৮।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, ২০২২ সালের ১৩ মে পর্যন্ত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ১২ হাজার ৮৮১ জন অবৈধ অভিবাসী ইতালিতে আশ্রয় নিয়েছেন।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বলছে, চলতি বছরে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছেন ৫৪২ অভিবাসী। নিখোঁজ হয়েছেন অনেকে।