সহজে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পাশাপাশি ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের জন্য এ সুবিধা অব্যাহত রাখতে জাপান ও ওইসিডি’র দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার এশিয়ার ভবিষ্যৎ-বিষয়ক ২৭তম আন্তর্জাতিক নিক্কেই সম্মেলনে এক ভিডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান তিনি। দুইদিনব্যাপী সম্মেলনটি জাপানের রাজধানী টোকিওতে স্ট্রিমিংয়ের পাশাপাশি অন-সাইট উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গভীরভাবে কৃতজ্ঞ থাকব, যদি জাপান ও অন্যান্য ওইসিডি’র দেশগুলো কমপক্ষে ২০২৯ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার সুবিধাগুলো প্রসারিত করে, যেন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের সর্বোচ্চ লক্ষ্য অর্জন আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার সম্মান অর্জন করে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেয়েছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বন্ধুদেশ ও অংশীদারদের প্রতি ২০২৬ সালের পরও বর্ধিত সময়ের জন্য বাংলাদেশকে অগ্রাধিকারমূলক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা বিবেচনা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে এফটিএ নিয়ে আলোচনার বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এবং জাপানসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং সিইপিএ নিয়ে আলোচনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলনে স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আতিথ্য দিচ্ছে এবং তাদের অবশ্যই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিজ বাসভূমে নিরাপদ, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে ফেরত পাঠাতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এই সংকটের একটি গ্রহণযোগ্য মীমাংসা খুঁজে পেতে অবদান রাখতে এবং আমাদের সাহায্য করার জন্য আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করছি।
এশিয়াকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও জনবহুল মহাদেশ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এখানে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ৬০ শতাংশ বাস করে। এটি বিশ্বের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষেরও আবাসস্থল। অতএব, আলোচনার মাধ্যমে মতপার্থক্য মিটিয়ে বিরোধপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে শান্তি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। শুধুমাত্র শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশ সৃষ্টি করেই এশিয়ার দেশগুলো জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে পারে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব এবং কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ পন্থা অনুসরণ করে। এটি জাতিসংঘের একটি প্রস্তাব দ্বারা স্বীকৃত, ‘শান্তির সংস্কৃতি’ যা ১৯৯৯ সালে গৃহীত হয়েছে এবং এরপর থেকে প্রতি বছর এটাকে স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে।
এশিয়ার দেশের সরকার হিসেবে শেখ হাসিনা বলেন, তারা এই বছরের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এশিয়ার ভবিষ্যত’কে সম্বোধন করায় তাদের দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করতে এখানে জড়ো হয়েছেন।
ভবিষ্যৎ এশিয়া গড়ার জন্য সম্মেলনে পাঁচটি ধারণা উপস্থাপন করেন শেখ হাসিনা। তিনি তার প্রথম প্রস্তাবে বলেন, এশিয়ার দেশগুলোকে একে অপরের প্রতি বন্ধুত্ব, বোঝাপড়া ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিভাজন মোকাবিলায় সংহতি প্রচার করতে হবে।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইসিটির সফট পাওয়ারকে বাংলাদেশসহ এশীয় দেশগুলো ন্যায্যতা, সম্মান, ন্যায়বিচার, অন্তর্ভুক্তি প্রভৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তার মধ্যকার ব্যবধান পূরণে একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে সর্বোত্তমভাবে ব্যবহার করতে পারে। কাজের মধ্যে সমতা আনয়ন করা যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী তার চতুর্থ ও পঞ্চম ধারণা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এশিয়ার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে টেকসই ও ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার উন্নতি, উভয় পক্ষের জন্য সুবিধাজনক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক স্থাপনের ওপর। এশিয়ার দেশগুলোর অভিন্ন উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাদের তা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ, টেকসই ও সমৃদ্ধ এশিয়া নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ তার সব বন্ধু ও অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি ও এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বৃহত্তর অর্থনীতির একটিতে পরিণত হয়েছে। এই যাত্রা জাপান, আমাদের বন্ধু ও অংশীদারদের দ্বারা সমর্থিত।