ফরিদপুরের নগরকান্দা খাদ্য গুদামে আনা তিন ট্রাক নিন্মমানের পচা চাল আটকে দিয়েছে স্থানীয়রা। গত ২০ দিন তিনটি ট্রাক খাদ্য গুদাম অভ্যন্তরে থাকলেও চাল খালাস করতে দেয়নি বিক্ষুব্ধরা।
এছাড়া অভিযোগ পাওয়া গেছে, নিম্নমানের চাল গুদামে রাখতে অস্বীকার করায় নগরকান্দা এলএসডি মো. আলী আজহারকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেন ।
খাবার অযোগ্য ও নিম্নমানের এসব চাল নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পচা চাল গুদামে না রাখতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতিনিধি হিসাবে দেলোয়ার হোসেন জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন।
স্থানীয় সূত্র ও অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ফরিদপুরের মধুখালী খাদ্য গুদাম থেকে গত ২৮ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত তিনটি ট্রাকে করে ৬০ টন চাল নগরকান্দা খাদ্য গুদামে রাখার জন্য আনা হয়। এসব চাল নিম্নমানের এবং খাবার অযোগ্য এমন সংবাদ পেয়ে পৌর মেয়র, মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতাসহ স্থানীয়রা ট্রাক থেকে কয়েক বস্তা চাল বের করেন। ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পচা চালা দেখে তারা এ চাল গুদামে না রাখার জন্য গুদাম কর্মকর্তা (এলএসডি) আলী আজহারকে অনুরোধ করেন। গুদাম কর্মকর্তা পচা চাল গুদামে রাখতে পারবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
তিন ট্রাক পচা চালের বিষয়ে গুদাম কর্মকর্তা আলী আজহার জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে জানান। এ সময় তারা চালগুলো বুঝে নেয়ার কথা বলেন। কিন্তু গুদাম কর্মকর্তা চাল তার গুদামে না রাখতে অনড় অবস্থানে থাকেন। এ নিয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেন গুদাম কর্মকর্তাকে ভর্ৎসনা করেন এবং চাল বুঝে নিয়ে গুদামে না রাখলে পরিণতি খারাপ হবে বলে হুমকি দেন। পচা ও খাবার অযোগ্য চাল গুদামে না রাখতে স্থানীয়দের চাপের মুখে তা গুদামে রাখা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে তিনটি ট্রাকে থাকা ৬০ টন চাল গুদাম অভ্যন্তরে রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন স্থান থেকে কম দামে পচা ও খাবার অযোগ্য চাল কিনে এনে তা গুদামে রাখা হয়। পরে তা ভিজিএফ, ভিজিডি, কাবিটা, কাবিখাসহ বিভিন্ন জনকে নিম্নমানের এসব চাল দেয়া হয়। ফলে সরকারের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়। একটি দুর্নীতিবাজ চক্র ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এসব নিম্নমানের চাল গুদামে দিয়ে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি পচা চাল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিনে তা গুদামে রাখার জন্য গুদাম কর্মকর্তাকে চাপ সৃষ্টি করেছেন। আমরা নগরকান্দাবাসী পচা চাল গুদামে রাখতে দেবো না।
এ সময় তারা বলেন, খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে জনৈক ব্যবসায়ী পচা চাল নিয়ে কথোপকথন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
নগরকান্দা খাদ্য গুদামের বেশ কয়েকজন কুলি শ্রমিক জানান, তারা বস্তা থেকে চাল বের করে দেখেছেন। সব বস্তার চাল গুলো একেবারেই নিম্নমানের। যা গরু-ছাগলেও খেতে পারবে না।
এ বিষয়ে নগরকান্দা পৌর মেয়র নিমাই চন্দ্র দাস বলেন, পচা চাল গুদামে রাখার জন্য আনা হয়েছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে আমরা বেশকিছু লোক সেখানে গিয়ে ট্রাক থেকে বস্তা খুলে দেখতে পাই, চালগুলো নিম্নমানের এবং দুর্গন্ধযুক্ত। কোনো মতেই এসব চাল মানুষের খাবারের যোগ্য নয়। আমরা পচা চাল না রাখার জন্য গুদাম কর্মকর্তাকে অনুরোধ করেছি।
সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন তার অভিযোগে জানান, পচা চাল আসার খবরে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এর সত্যতা পেয়েছি। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
এ দিকে পচা চাল নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়া এবং গুদাম কর্মকর্তা চাল বুঝে না নেওয়ায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৪ জুলাই তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
এ কমিটির সদস্য সচিব হলেন সদর উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তারিকুজ্জামান। অপর সদস্যরা হলেন- ভাঙ্গা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম ও টিআই শাহনেওয়াজ আলম।
ইতোমধ্যেই তদন্ত কমিটি ট্রাকে থাকা চাল স্যাম্পল হিসাবে নিয়ে তা ল্যাব টেস্টে পাঠিয়েছেন। রেজাল্ট আসার পর এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গেছে।
নগরকান্দা উপজেলা গুদাম কর্মকর্তা মো. আলী আজহার বলেন, মধুখালী থেকে তিনটি ট্রাকে করে ৬০ টন চাল আমার এখানে পাঠানো হয়। আমি চাল পরীক্ষা করে দেখতে পাই সেগুলো খাবার অযোগ্য এবং নিম্নমানের। আমি বুঝে শুনে এসব চাল রাখতে পারি না। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি জানাই। তারা আমাকে চাল বুঝে নিতে বলেন। আমি তা না করায় আমাকে হুমকি প্রদান করে বলা হয়, আমাকে দেখে নেওয়া হবে। পচা চাল আমি গুদামে রেখে জনগণ ও সরকারের সঙ্গে প্রতারণা করতে পারি না।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলতে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে কথা বলার জন্য ফোন দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
নগরকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম ইমাম রাজী টুলু জানান, তিনি পচা চালের বিষয়ে অভিযোগ শুনেছেন। এ বিষয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে কার্যকরী ব্যবস্থা নেবেন।