বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ফের আঘাত আসতে পারে, সতর্ক থাকার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২
  • ১১৭ বার পঠিত

১৫ আগস্টের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

তিনি বলেছেন, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা বিএনপি-জামায়াতের রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতায় সংঘটিত হয়েছিল। দেশের চলমান অগ্রযাত্রায় পুনরায় আঘাত আসতে পারে। এ আঘাত হয়তো সামনে আরো আসবে, কারণ আমার আব্বা যখন দেশটাকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটেছিল।

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ১৮তম বার্ষিকী উপলক্ষে রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় ভাপতির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই বর্বরোচিত ঐ গ্রেনেড হামলা সংঘটিত হয়েছিল।

সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশ হয়েছে। উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। জয় বাংলা শ্লোগান ফিরে এসেছে এবং জাতির পিতার নাম বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হচ্ছে। কাজেই এগুলো যারা সহ্য করতে পারবে না তারা বসে থাকবে না, আঘাত করবেই। বাংলাদেশকে তারা আবারো জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেষ্টা করবে। সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে ২১ আগস্ট আমাদের যেন নতুন জন্ম হয়েছে, সেদিন আমরা যারা ঐ র‌্যালিতে ছিলাম। কাজেই আমাদের দায়িত্ব জনগণের প্রতি এবং যতক্ষণ নিশ্বাস আছে সেই দায়িত্ব পালন করে যাব। সেটাই আজকের প্রতিজ্ঞা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক মন্দার চাপ আমাদের দেশের ওপর পড়েছে, তা থেকে মানুষকে কীভাবে রক্ষা করবো সেটাই আমাদের চিন্তা। সেজন্য সবার সহযোগিতাও দরকার। শুধু সমালোচনা করলেই হবে না, সবাইকে কাজও করতে হবে। সবাইকে বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে হবে।

২০০৪ সালে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল, তার উদাহরণ হিসেবে শেখ হাসিনা সরকারি প্রচেষ্টায় আলামত ধ্বংসের প্রচেষ্টার অভিযোগ তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে একটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেড আলামত হিসেবে সংরক্ষণের জন্য একজন আর্মি অফিসার বললে খালেদা জিয়া তাকে চাকরিচ্যুত করেছিলেন। সিটি কর্পোরেশন থেকে পানির গাড়ি এনে ঘটনার পরই ঘটনাস্থল ধোয়া শুরু করে, যেখানে চিহ্ন রাখার জন্য তিনি তার দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে লাল পতাকা লাগিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয়, হতাহতদের উদ্ধারে দলের নেতাকর্মীরা এগিয়ে এলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া যেকোনো সমাবেশ করলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অতীতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের বিভিন্ন ভবনের ছাদে নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী বা ভলান্টিয়ার রাখলেও সেদিন তা রাখতে দেওয়া হয়নি।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় বঙ্গবন্ধুর অন্যতম পলাতক খুনি কর্নেল রশিদ ও ডালিম জড়িত এবং তারা বাংলাদেশে ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া তাদেরও দেশ থেকে পালিয়ে যেতে সে সময় সাহায্য করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার রক্তাক্ত শরীর দেখে তারা প্রথমে ভেবেছিল অপারেশন সাকসেসফুল। কিন্তু যখন দেখলো আমি মরিনি, তখন তারা পালিয়ে গেছে। তারা এলো আবার চলেও গেল কীভাবে, যদি বিএনপি সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা করা না হয়?

সে সময়ে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরে সেখানে ষড়যন্ত্রের আভাস থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি। গ্রেনেড হামলা নিয়ে তাদের জাতীয় সংসদে কথাতো বলতে দেওয়াই হয়নি, এমনকি তিনি বিরোধী দলের নেতা হলেও তার মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এমন কথাও বলেছিলেন যে, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) ভ্যানিটি ব্যাগে করে সমাবেশে গ্রেনেড নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন’।

জিয়াউর রহমান এদেশে গুম-খুনের শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপির আমলে লাশ টানা, বোমাবাজিতে আহত হওয়া- এটা ছিল আমাদের প্রতিদিনের কাজ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ থেকে ২০০১ অত্যন্ত সফলভাবে দেশ পরিচালনা করে আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল বলেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

সরকারপ্রধান বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় ছিলাম। ২০০১ সালে আমরা ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আমেরিকান কোম্পানি গ্যাস নিতে চেয়েছিল সেটাতে আমি সমর্থন করিনি, কিন্তু খালেদা জিয়া সেটাতে সমর্থন করে ক্ষমতায় আসেন। নানা ষড়যন্ত্র করে আমাদের হারিয়ে দেওয়া হয়। সারাদেশে নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু করা হলো। পাকিস্তানি সেনারা যেভাবে নির্যাতন করেছিল ঠিক সেভাবেই অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়েছিল আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরো উল্লেখ করেন, আজকেও অনেকে গ্রেনেড হামলার নিদারুণ যন্ত্রণা বয়ে বেড়াচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পক্ষ থেকে তাদের সবরকম সহযোগিতা করা হলেও স্বজনহারাদের যে দুঃখ-বেদনা কিংবা আহতদের ক্ষতের যে জ্বালা, তা যেমন উপশম করা যায় না; তেমনি বারবার আঘাত এলেও ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ কখনই ‘রিভেঞ্জ’ নিতে যায়নি।

তিনি বলেন, আমরা তাদের ঘর-বাড়িও দখল করিনি, প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে হামলা-মামলাও করিনি। তাদের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলাগুলোই চলছে। আর যারা অগ্নিসন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। যারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি খালেদা জিয়ার ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন ইলেকশনসহ জিয়া, এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সময় দেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রহসনের নির্বাচনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

২০০১ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, সেটাই বা কেমন নির্বাচন হয়েছিল? কতজন ভোট দিতে পেরেছিল? তারপরও আমরা ভোট বেশি পেয়েছিলাম। কিন্তু সিট বেশি পেতে দেওয়া হয়নি।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা ও বিদেশিদের কাছে অহেতুক নালিশ জানানোর নামে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করার অভিযোগও আনেন বিএনপির বিরুদ্ধে।

তিনি বলেন, তারা বিদেশিদের কাছে কান্নাকাটি করে, তারা এসে রিকোয়েস্ট করে কোনোরকম তাদের একটু জায়গা দেওয়া যায় কি না। জায়গা দেবে কী দেবে না সে সিদ্ধান্ত দেবে বাংলাদেশের জনগণ। আবার কি সন্ত্রাসের যুগে ফেরত যাবে, নাকি আজকে যে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে সেই উন্নয়নের যুগে থাকবে।

সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা করেন। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদ এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা এবং তার পরিবারের সদস্য এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে ২১ আগস্টের শহিদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী এসে পার্টি অফিসের সামনে নির্মিত শহিদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ২১ আগস্টের শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি দলের সভাপতি হিসেবেও পৃথক একটি ফুলের রিং শহিদ বেদীতে অর্পণ করেন। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন।

উল্লেখ্য, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এইদিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিবিরোধী শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নজিরবিহীন গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে আক্রান্ত হন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐ ঘটনায় দলীয় নেতাকর্মীরা মানববর্ম রচনা করে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করলেও গ্রেনেডের আঘাতে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান এবং নেতাকর্মীসহ ২৪ জন প্রাণ হারান। এছাড়া পথচারীসহ ৫ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com