নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে অপরাধীরা চ্যালেঞ্জ করে বলেই এ ধরনের (বন্ধুকযুদ্ধে মৃত্যু) দুঃখজনক ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তবে যারা আত্মসমর্পণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্ধুকযুদ্ধে এ পর্যন্ত কত জন মারা গেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাউকে হত্যা করে না। বিভিন্ন উৎস থেকে আমরা যে তালিকা পাই, তা একত্রে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দেয়া হয়। তখন তারা বিভিন্ন অভিযানে যান, অপরাধী চ্যালেঞ্জ করলে এই ধরনের দুঃখজনক ঘটনা ঘটে। তবে যারা আত্মসমর্পণ করে, তাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।
তিনি বলেন, বর্তমানে কারাগারে ধারণক্ষমতা প্রায় ৮২ হাজার। অধিক হারে মাদক কারবারি আত্মসমর্পণ করছে, তাই কারাবন্দির মধ্যে অধিকাংশই মাদকের সঙ্গে জড়িত, যারা অবৈধ ব্যবসা করেন, তাদের পেশিশক্তির প্রয়োজন হয়। কিংবা তাদের অবৈধ অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। যেখানে অবৈধ ব্যবসা আছে, সেখানেই অবৈধ অস্ত্র থাকে।
অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, নাফ নদী রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল। তাই রোহিঙ্গাদের জীবন রক্ষার জন্য আমরা আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু তাদের জন্য আমাদের অবস্থা কাহিল হয়ে যাচ্ছে। কারণ আমাদের ফসলি জমি, পরিবেশ, বনভূমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমাদের সোসাইটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানবতা দেখিয়ে অবশ্যই বাংলাদেশ উদাহরণ হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের দুর্ভোগগুলোও বাড়ছে।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার বর্ডারের অধিকাংশই রোহিঙ্গা। এরপর মিয়ানমারের অন্য জাতি-উপজাতিরা আছে। কাজেই ইয়াবার সাপ্লাইটা রোহিঙ্গাদের মাধ্যমেই আসে। আমাদের এত প্রতিরোধের পরও রোহিঙ্গারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ব্যবসা করছে। এই অবৈধ ব্যবসা পরিচালনার সময় বিজিবির সঙ্গে গোলাগুলি হলে, বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে। কারণ, সেলভডিফেন্স আইনের আওতায় নিরাপত্তা বাহিনী অস্ত্র চালান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করে প্রচুর পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ অন্যান্য বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি ১ লাখ ৬১ হাজার ৩২৩ জনের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা রুজু করা হয়েছে।
তিনি বলেন, মাদকদ্রব্যের ক্ষতি হ্রাস কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দেশে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা সেবা বৃদ্ধির জন্য সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি নিরাময়কেন্দ্রের লাইসেন্স সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমাদের অঙ্গীকার, মাদকের ভয়াবহতা থেকে যুবসমাজকে রক্ষা করা। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। মাদকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ জন্য ২০১৮ সালে ৮ হাজার ৮০০টি সেমিনার হয়েছে। ২৮ হাজারের বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি গঠিত হয়েছে। আমরা প্রতি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠা করছি।
তিনি জানান, বুধবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে এ দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের প্রতিবাদ্য বিষয় ‘সুস্বাস্থ্যই সুবিচার, মাদকমুক্তির অঙ্গীকার’। দিবসটি পালনের জন্য সরকার কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের গতিশীলতা ও জনবল বেড়েছে। মাদকবিরোধী আইন-২০১৮ কে যুগোপযোগী করা হয়েছে। মাদকবিরোধী জনমত তৈরি করা হচ্ছে। মসজিদে জুমার নামাজের বয়ানে মাদকের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়ার জন্য বলা হচ্ছে। এ ছাড়া মাদকবিরোধী পোস্টার, লিফলেট টানানো হচ্ছে, টকশো করা হচ্ছে।