প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছে। চিকিৎসায় বাংলাদেশকে স্বনির্ভর করে তুলেছে। হৃদরোগের চিকিৎসায় বাংলাদেশ এখন প্রায় স্বাবলম্বী। হৃদরোগের ৯৫-৯৮ শতাংশ চিকিৎসার সক্ষমতা রয়েছে। এ লক্ষ্যে দেশে দক্ষ জনশক্তি, আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি রয়েছে।
শুক্রবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ আয়োজিত তৃতীয় বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে প্রচারিত পূর্বে-রেকর্ডকৃত ভিডিও বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাস্থ্য খাতের সার্বিক উন্নয়নে সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও গত ১৪ বছরে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বাংলাদেশকে পোলিও ও ধনুষ্টংকার (টিটেনাস) মুক্ত দেশ ঘোষণা করেছে।
তিনি আরো বলেন, এ পর্যন্ত ১১টি স্নাতকোত্তর ‘সুপার বিশেষায়িত হাসপাতাল’, কার্ডিওভাসকুলার হাসপাতাল, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, ক্যান্সার হাসপাতাল, নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল এবং অন্যান্য হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি সারাদেশে ৬০০টির বেশি হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, গ্রামের মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে আমরা ১৮ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। হাসপাতাল থেকে ৩০ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বিতরণ করা হচ্ছে। সারাদেশে ৪৩টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে, যেখানে মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৩০ হাজার স্যাটেলাইট ক্লিনিক রয়েছে। এছাড়া পাঁচ লাখ অটিস্টিক শিশুকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ১০৩টি সেবাকেন্দ্র রয়েছে।
সরকার প্রধান বলেন, আমরা প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছি। এখন মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১১৫টিতে দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫০টি। মেডিকেল কলেজের আসন সংখ্যা ১০ হাজার ৭৮৯-এ দাঁড়িয়েছে, যা ২০০৯ সালে ছিল ২০৫০টি। ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ ও ইউনিটের সংখ্যা ৩৭, ২০০৯ সালে ছিল ১৩টি।
তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করবে এবং ইতিমধ্যে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। সরকার গত তিন বছরে ১০ হাজার চিকিৎসক এবং ১৫ হাজার নার্স ও মিডওয়াইফ নিয়োগ দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এখন সফলভাবে হৃদরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন যার সুফল জনগণ পাচ্ছে এবং এর ফলে দেশের বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার জন্য একটি সম্পূর্ণ কার্ডিয়াক ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) একটি সম্পূর্ণ কার্ডিওলজি ও কার্ডিয়াক সার্জারি ইউনিট নির্মাণের মাধ্যমে আরো দক্ষ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তৈরির সুযোগ রয়েছে। বিএসএমএমইউতে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি বিশ্বমানের কার্ডিওভাসকুলার অব সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে।