নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে চতুর্থ ও শেষ ধাপের লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জুন) দেশের ২৪ জেলায় প্রায় ৫ লাখ প্রার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। গত ২৪ ও ৩০ মে প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের প্রেক্ষিতে পরের ধাপে তৃতীয় ও এবার শেষ ধাপের পরীক্ষায় বেশ কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ ও মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, মনিটরিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয় অধিদফতর পরিদফতর থেকে কর্মকর্তাদের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে জেলায় জেলায় পরীক্ষার আগের দিন পাঠানো হয়েছে। পদস্থ এসব কর্মকর্তা পরীক্ষার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন। পরীক্ষা চলাকালে এবং কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা কোনো ধরনের ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস নিতে পারবে না। নারী পরীক্ষার্থীদের কান খোলা রেখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। নির্দেশনার পরও যদি পরীক্ষা কেন্দ্রে কেউ কান খোলা না রাখেন তবে তাকে বহিষ্কারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ জুন মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে জেলার পরীক্ষা কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য ২৪ জেলায় ২৪ জন কর্মকর্তাকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়। এসব কর্মকর্তাদের আগের দিনই উক্ত জেলাগুলোর অবস্থান এবং পরের দিন অনুষ্ঠিত নিয়োগ পরীক্ষা মনিটরিং করার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের ডিপিইতে বৈঠক করা হয়েছে এবং মনিটরিংয়ের বিশেষ নিদের্শনা দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবারের (২৮ জুন) পরীক্ষার প্রশ্নে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সুষ্ঠু ও নকলমুক্তভাবে অনুষ্ঠানের জন্য বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) মন্ত্রণালয়ে বুয়েট ও ডিপিই’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন বৈঠক করেছেন। বৈঠকে জেলা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত জেলার সংস্থাগুলোকে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শেষ ধাপের পরীক্ষা এবং পরীক্ষা পরবর্তী ফল প্রকাশ সম্পর্কে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল হোসেন বলেন, পরীক্ষার কোনো ধাপেই মূলতঃ প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটেনি। তবে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে কোনো বিশেষ একটি জেলায় প্রশ্নফাঁসের তথ্য আসার পর জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। কিছু অপরাধীদের গ্রেফতারও করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এছাড়া পরীক্ষা শেষ হলেই ফল প্রকাশের কার্যক্রম শুরু হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এফ এম মঞ্জুর কাদির পরীক্ষার ফল প্রকাশ সম্পর্কে বলেন, আগস্টের মাঝামাঝি থেকে ফল প্রকাশ করা হবে। যে ধাপের ফল প্রকাশ করা হবে, তার এক সপ্তাহের মধ্যেই সেসব জেলায় মৌখিক পরীক্ষাও শুরু হবে।
শুক্রবার (২৮ জুন) সকাল ১০টায় এ পরীক্ষা শুরু হবে। চলবে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। পরীক্ষার ৩০ মিনিট আগে প্রতিটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে।এবার কোনো জেলায় অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা হবে না। প্রশ্ন মুদ্রণ ও বিতরণের ক্ষেত্রেও বেশ কিছু জরুরি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যে জেলার পরীক্ষা সে জেলার কর্মচারীদের অন্য জেলার প্রশ্ন মুদ্রণ ও বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কোন জেলায় কোন সেটে পরীক্ষা হবে, তা কম্পিউটারে বিশেষ নির্দেশনা অনুসারে প্রশ্ন বন্টন করা হবে। এর সাথে কোনো মানুষের যোগাযোগ থাকবে না।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তত্ত্বাবধানে নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে এবং নতুন পদ্ধতিতে এ নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে। নতুন সফটওয়্যারের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীর আসন নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে পরীক্ষার্থীর আসন বণ্টন অনুযায়ী প্রশ্নের সেটও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
একই কক্ষে পাশাপাশি বসেও দু’জনের প্রশ্ন এক হবে না। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে একাধিক সেট থেকে লটারির মাধ্যমে একটি সেট নির্ধারণ হবে। পরে বিষয়টি জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হবে। এক জেলার সাথে অন্য জেলার প্রশ্ন সেটও মিলবে না বলে মন্ত্রণালয় ও ডিপিই সূত্রে জানা গেছে।
চতুর্থ ও শেষ ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা যে সব জেলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে সে সব জেলার কোনো কোনো উপজেলায় আগের ধাপেও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ার পরীক্ষা আগে ও পরে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
যেসব জেলায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে
ঢাকা জেলার একাংশ গাজীপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ , ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা, নড়াইল, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, নওগাঁ, বগুড়া, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ। শুক্রবার এসব জেলায় একযোগে এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
সুত্র: জাগোনিউজ