শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩২ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

স্বাক্ষর জালিয়াতি, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়ে আবেদন কাউন্সিলরের

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০২৩
  • ৮১ বার পঠিত

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
গাজীপুর সিটির বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আগের পদে পুনর্বহাল চেয়ে কাউন্সিলররা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে যে আবেদন দিয়েছেন তা নিয়ে জল আরও ঘোলাই হলো।

ওই আবেদনপত্রে ৬১ জন কাউন্সিলরের স্বাক্ষর জুড়ে দেওয়া হলেও তাদের অনেকেই এ বিষয়ে অবগত নন। এমনকি তারা ওই আবেদনে স্বাক্ষরও করেননি।

স্বাক্ষর জালিয়াতির ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের কাছে আবেদন করেছেন স্বাক্ষর না করেও নাম থাকা কাউন্সিলররা।

জাহাঙ্গীরকে মেয়র পদে ফেরাতে করা আবেদনের ৫২ নম্বর নাম ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আবুল হাসেমের। অনুমতি ছাড়াই তার নাম ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করায় তিনি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বরাবর আবেদন করেছেন।

আবেদনে আবুল হাশেম উল্লেখ করেছেন, ১৩ মার্চ তিনি জানতে পারেন ‘গাজীপুরের উন্নয়ন ও আগামী নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মো. জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়রের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য স্বাক্ষরকারী কাউন্সিলরগণের আকুল আবেদন’ নামে একটি চিঠি ১২ মার্চ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে।

আবুল হাশেম বলেন, ‘ওই আবেদনের কাউন্সিলরদের নাম ও স্বাক্ষরের ৫২ নং ক্রমিকের তার নাম ও স্বাক্ষর যাচাই করে দেখি উক্ত নাম ও স্বাক্ষর আমার নিজ হস্তে করা নয়। কে বা কারা অসৎ উদ্দেশ্যে আমার নাম ও স্বাক্ষর দিয়ে উক্ত পত্রটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।’

এদিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে জমা পড়া আবেদনে তাদের নাম ও স্বাক্ষর থাকার খবরে বিস্মিত হয়েছেন আরও বেশ কিছু কাউন্সিলর। তারা বলছেন, জাহাঙ্গীরের এই জালিয়াতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।

গাজীপুর সিটির বরখাস্ত মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে বিশ্ব ইজতেমার খরচের ভাউচারে অনিয়ম, নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক প্রশস্তকরণের কাজে ইস্টিমেট অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন না হওয়া, অনেক সড়কে ইস্টিমেটের অতিরিক্ত সড়ক প্রশস্তকরণের নামে বাড়ি-ঘর ভাঙা, ভাঙা বাড়ি-ঘরের জমি অধিগ্রহণে ও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের নামে অর্থ আত্মসাত ও জিসিসির অর্থ লুটপাটসহ মোট ৭৪০০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে। এসব দুর্নীতির বিষয় দুদকের অনুসন্ধান পর্যায়ে রয়েছে।
অন্যদিকে তদন্তের অংশ হিসেবে দুদকের তদন্ত কমিটির সদস্যরা গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন পরিদর্শন, কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকসমূহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে ইতোমধ্যেই। ওই প্রতিনিধি দল গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং বিভিন্ন নথিপত্র সংগ্রহও করেছে।

দুদক সূত্র বলছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কয়টি ব্যাংকে কয়টি হিসাব, কার নামে কীভাবে পরিচালিত হয়েছে বা হয়েছে। এরই মধ্যে গাজীপুরের কোণাবাড়ীতে একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিটি করপোরেশনের নামে জাহাঙ্গীর আলমের একক স্বাক্ষরে অ্যাকাউন্ট খুলে আড়াই কোটি টাকা দুর্নীতির তথ্যও পাওয়া গেছে।

জাহাঙ্গীর আলমকে ভুয়া টেন্ডার, আরএফকিউ, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ এবং প্রতিবছর হাট-বাজার ইজারার অর্থ যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগে ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

পরে গাজীপুর সিটির প্যানেল মেয়র মো. আসাদুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় করা ৭টি মামলা হয়। গত বছরের ২২ আগস্ট আগাম জামিন পান তিনি।

এর আগে গত ১ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বহিষ্কৃত মেয়র এবং গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের বহিস্কৃত সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। যাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, ‘দুর্নীতিবাজকে দলে ফিরিয়ে নেওয়া পরোক্ষভাবে দুর্নীতিকে সমর্থন করার সামিল।’

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com