জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: কাউন্সিল উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মনোনয়ন ফরম বিতরণ কার্যক্রম এবং বিক্ষুব্ধদের আন্দোলন কর্মসূচি আজ শনিবার (২৯ জুন) পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলনকারীদের সাথে বিএনপির বৈঠকের পর এ ঘোষণা আসে। এদিকে আজ দলের সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির নিয়মিত বৈঠকে ছাত্রদলের কমিটি গঠনকে ঘিরে সৃষ্ট সংকট নিরসনে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির এ বৈঠক নিয়মিত হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপির মাধ্যমে আজকের বৈঠকে সংযুক্ত হবেন। তবে বৈঠকে চূড়ান্ত সমাধান না হলে রোববার (৩০ জুন) থেকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে টানা কর্মসূচিতে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিক্ষুব্ধরা।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার প্রার্থীদের মাঝে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নয়াপল্টনে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের দিনব্যাপী অবস্থানে ওইদিন আর কার্যক্রম শুরু হয়নি। পরে সংকট নিরসনে বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে বৈঠক করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির চার নেতা।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের কাছে তাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়টি জানতে চান বিএনপির নীতি-নির্ধারকরা। আন্দোলনকারীরা কাউন্সিলের তফসিল বাতিল এবং বয়সসীমা তুলে দিয়ে নবীন-প্রবীণ সমন্বয়ে আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত ছয় মাসের স্বল্পকালীন এবং পরবর্তীতে এক বছরের জন্য ছাত্রদলের ধারাবাহিক কমিটি গঠনের সঙ্গে দলের সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার দাবি তোলেন।
তবে আলোচনার একপর্যায়ে ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধ এক নেতা বলেন, শেষ পর্যন্ত যদি তাদের (বয়স্ক) দিয়ে সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করা সম্ভব না হয়-তাহলে ২০০০ সালের এসএসসি নয়, একেবারে নিয়মিত (অনার্স ও মাস্টার্স) ছাত্রদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। কারণ, ২০০০ সালে যারা এসএসসি পাস করেছে, তাদের কেউ এখন আর নিয়মিত ছাত্র নয়। তাদের বয়স এখন ৩৫।
সিনিয়র নেতারা তখন ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের জানান, তাদের দাবিগুলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করবেন। এর জন্য তাদের দুইদিন সময় দিতে হবে। জবাবে ছাত্রদল নেতারা বলেন, তারা সময় দিতে রাজি আছেন। তবে এ সময়ের মধ্যে সংগঠনের কাউন্সিলের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হবে।
বিএনপি নেতারা জানান, কাউন্সিলের ব্যাপারে তারা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না। এটা একমাত্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জানেন। এ পরিস্থিতিতে ছাত্রদল নেতারা তাদের জানিয়ে দেন, ফরম বিতরণ কার্যক্রম শুরু হলে তারাও কর্মসূচি অব্যাহত রাখবেন। আর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তার দায়-দায়িত্ব সিন্ডিকেটকেই নিতে হবে।
বৈঠক সূত্র আরও জানায়, বৈঠকের একপর্যায়ে সিনিয়র নেতারা ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের কাছে জানতে চান- কর্মসূচি চলাকালে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে কেন অপদস্ত করা হলো? তখন বিক্ষুব্ধরা বলেন, তারা এর সাথে কোনোভাবেই জড়িত নয়। ওই সময় তারা কার্যালয় থেকে বেশ কিছুটা দূরে ছিলেন। এ ব্যাপারে আপনারা (সিনিয়র নেতারা) ভিডিও ফুটেজ দেখতে পারেন।
তারা আরও বলেন, আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তাছাড়া তাদের অবস্থান কর্মসূচির মধ্যে অনুপ্রবেশও ঘটতে পারে। তাই কারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটা তারা বলতে পারবে না। বরং তারা সেখানে গিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিবকে নিরাপদে কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশে সহায়তা করেছেন।
জানা গেছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ছাত্রদল নিয়ে দলের আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকলেও কাউন্সিলের পুনঃতফসিল ঘোষণা করতে হবে। কারণ, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীদের মাঝে ২৭ ও ২৮ জুন মনোনয়ন ফরম বিতরণের কথা থাকলেও তা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রদলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য এবিএম মোশাররফ হোসেন শুক্রবার রাতে বলেন, আমরা বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। তবে এখনো কোনো বৈঠক হয়নি।
এদিকে ছাত্রদলের কাউন্সিলকে স্বাগত জানিয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মিছিল করেছে সংগঠনের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা।