শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৪ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

জাতীয় কবি কাজী নজরুলের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ২৫ মে, ২০২৩
  • ৯৪ বার পঠিত

আজ ২৫ মে (বৃহস্পতিবার)। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম এই প্রাণপুরুষের নামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ‘বিদ্রোহী কবি’, ‘প্রেমের কবি’, ‘সাম্যের কবি’সহ নানা অভিধা।

জাতীয় পর্যায়ে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। জাতীয় পর্যায়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলো। এ বছর জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপনের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে–‘অগ্নিবীণার শতবর্ষ: বঙ্গবন্ধুর চেতনায় শাণিতরূপ।’

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে আশা প্রকাশ করে বলেন, নতুন প্রজন্ম নজরুল-চর্চার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে এবং দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করবে।

কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকের কঠিন শাসন কবির বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করতে পারেনি। নিজের ওপর ছিল তার গভীর আত্মবিশ্বাস এবং সত্যের প্রতি তার ছিল অবিচল আস্থা। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান এবং মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে নজরুলের কবিতা ও গান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, নজরুলের সাহিত্যকর্মে পরাধীনতা, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। অসামান্য ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক ও জাতীয়তাবোধের মূর্ত প্রতীক।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, মানবতা, সাম্য ও দ্রোহের কবি নজরুলের আজীবন সাধনা ছিল সমাজের শোষিত ও নিপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক মুক্তি এবং মানুষের সামাজিক মর্যাদার স্বীকৃতি অর্জন। তিনি অন্যায়, অসত্য, নির্যাতন-নিপীড়ন, নানামাত্রিক অসাম্য ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে যুগে যুগে প্রতিবাদ প্রতিরোধের অনাবিল প্রেরণা জুগিয়েছেন।

জানা যায়, জাতীয়ভাবে এবার জন্মবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়েছে কবির স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুরে।

সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের আয়োজনে কবির জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপিত হবে। তিন দিনব্যাপী (২৫ থেকে ২৭ মে) অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে নজরুল’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

এ ছাড়া ঢাকাসহ জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লার দৌলতপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় ও স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন করা হবে। এ উপলক্ষে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করবে স্থানীয় প্রশাসন।

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। একাডেমির নজরুল মঞ্চে স্থাপিত নজরুল প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে। বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি একক বক্তৃতা, নজরুল পুরস্কার প্রদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪তম জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হবে। এ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে সমবেত হয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা শোভাযাত্রা সহকারে সকাল সাড়ে ৬টায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করা হয়েছে। পরে উপাচার্যের সভাপতিত্বে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে এক আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে চিরনিদ্রায় শায়িত কবির সমাধিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়েছে।

এক বিবৃতিতে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতীয় কবির জন্মদিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, অনুরাগীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উদযাপনে নজরুল একাডেমি ভবনে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে (মগবাজার মোড় বেলালাবাদ কলোনী, ঢাকা) তিন দিনব্যাপী কর্মসূচির আয়োজন করেছে কেন্দ্রীয় নজরুল একাডেমি।

১৯৭২ সালের ২৪ মে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিনে তাকে ঢাকায় এনে জাতীয় কবির মর্যাদায় ভূষিত করেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবির ‘চল্ চল্ চল্, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল’কে সামরিক সংগীত হিসেবে নির্বাচিত করে তাকে সম্মানিত করা হয়।

১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট তৎকালীন পিজি (বর্তমানে বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। মৃত্যুর পর কবির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন গানের বুলবুল কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল ‘দুখু মিয়া’। তিনি অবিভক্ত বাংলার (বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ) বর্ধমান জেলার আসানসোলের জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ সালের ২৫ মে) জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন প্রেম, বিরহ-বেদনা ও সাম্যের কবি। তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্য-সংগীত তথ্য সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সময় কাজী নজরুল ইসলামের লেখনী ধুমকেতুর মতো আঘাত করে জাগিয়ে তুলেছিল ভারতবাসীকে। বিদ্রোহী কবিতে পরিণত হন তিনি।

কবি সাম্রাজ্যবাদ, ফ্যাসিবাদ, নিপীড়ন, অনাচার, বৈষম্য, শোষণ ও পরাধীনতার বিরুদ্ধে অগ্নিকণ্ঠে সোচ্চার হয়ে লিখেছেন অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস ও গান। এ ছাড়া তিনি ছিলেন চির প্রেমের কবি।
এ কারণেই অনায়াসে এ কবি বলে গেছেন, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যে জন, খুঁজি তারে আমি আপনায়।’

এ ছাড়াও একাধারে তিনি কবি, গল্পকার, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, শিশু সাহিত্যিক, অনুবাদক, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, স্বরলিপিকার, গীতিনাট্যকার, গীতালেখ্য রচয়িতা, চলচ্চিত্র কাহিনিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক, সংগীত পরিচালক, গায়ক, বাদক, সংগীতজ্ঞ ও অভিনেতা ছিলেন।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখে গেছেন ২২টি কাব্যগ্রন্থ, সাড়ে ৩ হাজার মতান্তরে ৭ হাজার গানসংবলিত ১৪টি সংগীত গ্রন্থ, তিনটি কাব্যানুবাদ ও তিনটি উপন্যাস গ্রন্থ, তিনটি নাটক, তিনটি গল্পগ্রন্থ, পাঁচটি প্রবন্ধ, দুটি কিশোর নাটিকা, দুটি কিশোর কাব্য, সাতটি চলচ্চিত্র কাহিনিসহ অসংখ্য কালজয়ী রচনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com