নিজস্ব প্রতিবেদক, সিটিজেন নিউজ: এমন পার্লামেন্টে বসেছি যেখানে কোনটা সরকারি দল আর কোনটা বিরোধী দল কিছুই বুঝতে পারছি না বলে জানিয়েছেন, বিএনপি থেকে মনোনীত সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ।
রোববার জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতের জন্য বরাদ্দ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি একথা বলেন।
রুমিন ফারহানা বলেন, দেশে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিদের দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভরসা নেই। স্বাস্থ্যখাতে কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ দেবার কথা যার আশপাশেও নেই আমরা। এবার আমাদের বরাদ্দ হয়েছে দশমিক ৮৯ শতাংশ। যেটা দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে কম। শ্রীলঙ্কা, ভারত, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপে যথাক্রমে বরাদ্দ জিডিপির ২ শতাংশ, ২.৩, ২.৫, ২.৬ এবং ১০.৮ শতাংশ।
এ সময় স্বাস্থ্য সেবাখাতে বরাদ্দ অপ্রতুল, দেশে চিকিৎসা সেবার মান খারাপ, যার জন্য বিদেশে কোটি কোটি টাকা খরচ করে চিকিৎসা করতে যাওয়ার অভিযোগ করেন এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, এমনকি আফগানিস্তানে বরাদ্দ ২.৯ শতাংশ। রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ কম থাকার কারণে মানুষের ব্যক্তি ব্যয়, নিজের হিস্যা অনেকখানি বেড়ে যায়। এবার চিকিৎসা বাবদ ব্যক্তির নিজের পকেট থেকে ব্যয় ৬৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭২ শতাংশে গেছে। স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় ব্যক্তির নিজের হিস্যা ভুটানে ২০ শতাংশ, মালদ্বীপে ১৯, নেপালে ৫৫ এবং আমাদের থেকে অনেক দরিদ্র সাব সাহারান আফ্রিকা দেশে মোট স্বাস্থ্য ব্যয় ব্যক্তির গড়ে মাত্র ৩৬ শতাংশ ব্যয় করে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আউট অব পকেট এক্সেন্ডেচার সূত্র উল্লেখ করে এসব কথা বলেন তিনি।
রুমিন বলেন, এভাবেই দেশের প্রায় সব মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার চাইতে স্বাস্থ্যখাতে কিছু মানুষের স্বার্থ রক্ষাকে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে, স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রধান অংশ নিজ পকেট থেকে মিটাতে গিয়ে প্রতি বছর ৬৬ লাখ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে চলে যায়।
তিনি বলেন, ছোট একটি পরিসংখ্যান দেই। বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য ডাক্তারের সংখ্যা দশমিক ৫ জন, যা নেপালে দশমিক ৬, ভারতে দশমিক ৮, পাকিস্তানে ১ এবং মালদ্বীপে ৩ দশমিক ৬ জন। প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য বাংলাদেশে নার্স আছে দশমিক ৩ জন, এই সংখ্যা ভুটানের মতো দেশে ১ দশমিক ৫, ভারতে ২ দশমিক ১, মালদ্বীপে ৮ মশমিক ২ এবং নেপালে ২ জন। দুই ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্নে।
বিএনপির এই সংসদ সদস্য বলেন, শুধু ভারতে যেসব বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য যান, তারা প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেন বছরে। এক সময় অনেক পিছিয়ে থাকা মালয়েশিয়ায় এখন অনেকে চিকিৎসার জন্য যান। দেশে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিরাও যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান, তখন স্পষ্ট হয়ে যায় তাদেরও কোনো ভরসা নেই এদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি।