বাবা-মা বলতে তেমন কেউই নেই। এমনকি মাথা গোঁজার মতো ঠাঁইও ছিল না। এজন্য সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে জায়গা হয়েছিল আশ্রিত রহিমা ও তামান্না নামে দুই তরুণীর। এবার ধুমধাম করে বিয়ে দেওয়া হলো তাদের দু’জনকে।
শনিবার দুপুরে বরিশালের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বর্ণিল আয়োজনে প্রায় ৩০০ অতিথির উপস্থিতিতে রহিমা ও তামান্নাকে বিয়ে দেওয়া হয়।
এদিন ওই দুই তরুণীর বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আল মামুন তালুকদার, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক একেএম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, তামান্নার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে বাবুগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা দোকানি ফরিদ হোসেনের। আর রহিমার সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার জাগুয়ার বাসিন্দা দিনমজুর রাসেলের।
তিনি আরো বলেন, পরবর্তী জীবনে যেন তারা স্বাবলম্বী হতে পারে এজন্য উভয় দম্পতিকে নগদ ৫০ হাজার করে টাকা, সেলাই মেশিন, ঘরের সকল তৈজসপত্র উপহার দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু এই মেয়ে দুটি আমাদের দায়িত্বে রয়েছে। ওদের পরবর্তী জীবনের নিশ্চয়তার দায়িত্বও আমাদের।
তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও আরো ১৬ জনকে বিয়ে দিয়েছে বরিশালের সামাজিক প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটি। এ নিয়ে সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, ‘আমরা আরো ১৬ জনকে এমন আয়োজন করে বিয়ে দিয়েছি। এই দু’জন নিয়ে মোট ১৮ জনকে বিয়ে দেওয়া হলো। আগে যাদের বিয়ে দেওয়া হয়েছে তারা সকলেই ভালো আছে। আমরা তাদের নিয়মিত খোঁজ-খবর রাখি।’
জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এটি অত্যান্ত আনন্দের সংবাদ আমাদের জন্য। সরকার সব সময়ে সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পাশে রয়েছে। পথহারা দুজনের আজকে নতুন ঠিকানা হলো। জেলা প্রশাসন সব সময়ে এসব কাজে সহায়তা করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও পাশে থাকবে।
বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান বলেন, আমি খুবই আনন্দিত এই বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে পেরে। আজকে দুজন মেয়ের বিয়েতে আমরা সহায়তা করেছি। এভাবে যদি আমরা সকলেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেই তাহলে অবহেলিত, অসহায় কমে আসবে। তিনি নবদম্পতির আগামী জীবনের সাফল্য কামনা করেন।
জানা গেছে, বর ফরিদ হোসেন বাবুগঞ্জ উপজেলার মানিককাঠিতে চায়ের দোকান চালান। এর আগেও তার এক বিয়ে হয়েছিল। সেই সংসারে চারটি সন্তান রয়েছে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি সমাজসেবার আওতায় এই কেন্দ্র থেকে তামান্নাকে পছন্দ করে দ্বিতীয় দফায় ঘর বাঁধলেন।
অন্যদিকে জাগুয়ার বাসিন্দা রাসেলেরও দ্বিতীয় বিয়ে এটি। ২০২২ সালে বিয়ে করলেও তার স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর এই কেন্দ্রের রহিমাকে দেখে পছন্দ করে দ্বিতীয় দফায় ঘর বাঁধলেন তিনি।