রক্তাক্ত ইতিহাসের সাক্ষী আগস্ট মাস। ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তি এই মাসকেই বেছে নিয়েছিল তাদের প্রতিশোধের স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট জাতির জনকের সুযোগ্যা কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
আল্লাহর অশেষ রহমতে শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও আওয়ামী লীগ নেত্রী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন, আহত হন দুই শতাধিক নেতাকর্মী। অনেকে চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। ২০০৫ সালেও দেশব্যাপী একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। ২১ আগস্টের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না।
এটিও ছিল স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে নির্মূল করার আরো একটি অপপ্রয়াস। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন সরকার। তদন্তে উঠে এসেছে, হাওয়া ভবনে তারেক রহমানের উপস্থিতিতে দফায় দফায় বৈঠকে এই হামলার পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল। জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদকে (হুজি) হামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
হুজি নেতা মুফতি হান্নান তাঁর জবানবন্দিতে এই পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। এর সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা লুত্ফুজ্জামান বাবর, সমাজকল্যাণমন্ত্রী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, প্রতিমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ বিএনপি ও জামায়াতের আরো কিছু নেতা সম্পৃক্ত ছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই) এবং পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন পরিকল্পনার সঙ্গে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে হামলা চালিয়েও হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পেরেছে। অবিস্ফোরিত গ্রেনেডসহ মামলার আলামতগুলো দ্রুত নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার একই পরিকল্পনা থেকে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্যও একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। এর আগে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনার জনসভার মঞ্চের পাশে ৭০ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিস্ফোরণের আগেই সেটি ধরা পড়ে যায়। ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রামে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রাকে স্বয়ং পুলিশ গুলি চালায়। এতে ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হলেও অল্পের জন্য রক্ষা পান শেখ হাসিনা। ২১ আগস্টের ঘটনাও ছিল সেই ধারাবাহিক পরিকল্পনারই অংশ। এদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
১৪ বছর পর নিম্ন আদালতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হয়েছে। রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং আরো ১৯ জনের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের শুনানি চলছে। আমরা আশা করি, দ্রুত এই মামলার রায় কার্যকর করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের নির্মম হত্যাযজ্ঞ ঘটানোর সাহস না করে।
লেখক: জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।