বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এর সমীপে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা: আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক ডা: মুহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, আপনি অবগত আছেন বাংলাদেশে ১৯৫৮ সাল থেকে ফিজিওথেরাপি পেশা চালু রয়েছে। তারপর এই পেশার উৎকর্ষ সাধনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ চালু হয়েছিল। তারপর সেটি বেদখল হয়ে গেলো। “বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি” সরকারিভাবে অনুমোদন পেলো। তারপর অনুমোদনকৃত জায়গায় “বস্তি উচ্ছেদ” এর নামে মামলা চললো দীর্ঘদিন, রায় হলো, কিন্তু তারপরও আলোর মুখ দেখলো না দেশের একমাত্র সরকারি ফিজিওথেরাপি কলেজটি। ৪৩টি সাবজেক্টে ৫৩৫০ ঘন্টা অধ্যয়ন করে ৪ টি পেশাগত পরীক্ষায় পাশ করে এক বছর ইন্টার্নিশিপ করে ফিজিওথেরাপিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনকারী ফিজিওথেরাপিস্টরা সরকারি চাকুরীর দেখা পেলো না। নেই পর্যাপ্ত সরকারি পোস্ট, নেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। সরকারি কাঠামো নেই বলে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও নেই যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পদকাঠামো, নেই মানসম্মত বেতনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি। “ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল টেকনোলজি (ফিজিওথেরাপি)” কোর্স সম্পন্নকারী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে চলছে বেসরকারি হাসপাতালের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা। ফলে ফিজিওথেরাপিস্টদের সম্মানজনক স্হান হয় নি সেখানে। নিতান্ত বাধ্য হয়ে এহেন অবস্থায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ফিজিওথেরাপিস্ট বেঁচে আছে শুধু নিজস্ব প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে।
আপনি অবগত আছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর সংবিধানে ৪০ নং অনুচ্ছেদে বলা আছে “আইনের দ্বারা আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে কোন পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের কিংবা কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনার জন্য আইনের দ্বারা কোন যোগ্যতা নির্ধারিত হইয়া থাকিলে অনুরূপ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি-গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসায়-পরিচালনার অধিকার থাকিবে”। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য ফিজিওথেরাপিস্টদের যোগ্যতা নির্ধারণের কোনও আইন দীর্ঘ এতবছরেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় উপহার দিতে পারে নি। ফলে ফিজিওথেরাপিস্টদের প্রাইভেট প্র্যাকটিসেও সংগ্রাম করে বাচঁতে হয়েছে যারা ফিজিওথেরাপিস্ট নয় কিন্তু ফিজিওথেরাপিস্ট পরিচয়ে জনগণকে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণা করত (যেমন: অসাধু মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, অসাধু টেকনিশিয়ান, আয়া, বুয়া, অদক্ষ শ্রমিক প্রমুখ) তাদের সাথে। এত দীর্ঘ সংগ্রামের পর ২০১৮ সালে “বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন” প্রণীত হয় বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দৃষ্টিপাতে। উক্ত আইনে ফিজিওথেরাপিস্টদের যোগ্যতা নির্ধারিত হয় এবং উক্ত আইনের আওতায় ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশাগত কর্মতৎপরতা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার জন্য “বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল” গঠনের কার্যক্রম সূচনা হয়, যা এখনো চলমান।
আপনি অবশ্যই অবগত আছেন ফিজিওথেরাপিস্টরা ৩০০ মার্কের এনাটমি, ৩০০ মার্কের ফার্মাকোলজিসহ ফিজিওলজি, বায়েকেমেস্ট্রি, কমিউনিটি মেডিসিন, জেনারেল সার্জারী, প্যাথলজি, মাইক্রোবায়োলজি, রিউম্যাটোলজি, অর্থোপেডিক্স, নিউরোলজি, পেডিয়াট্রিক্স, সাইকিয়াট্রি ও সাইকোলজি ইত্যাদি মিলিয়ে সর্বমোট ৪৩টি সাবজেক্ট পড়ে পাস করে। তারপরও যখন ফিজিওথেরাপিস্টদের ডা: প্রিফিক্স ব্যবহারের অধিকার ক্ষুন্ন হয় বিএমডিসি আইন ২০১০ এর ২৯ নং অনুচ্ছেদ দ্বারা তখন হাইকোর্ট রিট পিটিশন দাখিল করা হয় ১০৯৯৮/২০১১ নং মূলে। তার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট ডা: পদবী ব্যবহারে ফিজিওথেরাপিস্টদের ওপর উক্ত ২৯নং অনুচ্ছেদ স্হগিত করে৷ ফলে ফিজিওথেরাপিস্টদের ডা: পদবী ব্যবহার অধিকার সংরক্ষিত হয়।
আপনার অধীনস্থ পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) জনাব ডা: মো: হাবিবুল আহসান তালুকদার এর নেতৃত্বে একটি দল ঢাকার শ্যামলীস্হ ডিপিআরসি হাসপাতাল গত ২৬শে সেপ্টেম্বর পরিদর্শন করে। পরিদর্শন শেষে জনাব ডা: মো: হাবিবুল আহসান তালুকদার মন্তব্য করেন উক্ত হাসপাতালের স্বনামধন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক জনাব ডা: সফিউল্ল্যাহ প্রধানীয়ার ডা: পদবী ব্যবহারের অধিকার নেই, তিনি চিকিৎসক নন৷ উল্লেখ্য উক্ত হাসপাতালটি একটি ফিজিওথেরাপি ভিত্তিক বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং বর্ণিত চিকিৎসক হাসপাতালের প্রধান ফিজিওথেরাপিস্ট তথা ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক। শুধু এতটুকুই নয় সংশ্লিষ্ট জনাব ডা: মো: হাবিবুল আহসান তালুকদার মিডিয়ার সামনেই উক্ত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসককে প্রশ্নবিদ্ধ করার মানসে অপদস্ত করেন ও মানহানির চেষ্টা করেন।
মেডিকেল ফিজিশিয়ানগণ চিকিৎসক, ডেন্টিস্টগন দন্ত চিকিৎসক, ফিজিওথেরাপিস্টগণ ভৌত চিকিৎসক। প্রত্যেকের কর্মপরিধি ও পরিচয় স্বতন্ত্র। সেখানে বর্ণিত ফিজিওথেরাপিস্টকে অপদস্ত ও মানহানি এবং ফিজিওথেরাপিস্টদের ডা: পদবী নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে ফিজিওথেরাপির সকল পেশাজীবি, শিক্ষক ও শিক্ষকবৃন্দ।
আগামী ৪৮ ঘন্টার ভিতর সংশ্লিষ্ট পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) মহোদয় তার মন্তব্য প্রত্যাহার ও দুঃখপ্রকাশ না করলে সম্মিলিতভাবে ফিজিওথেরাপি পেশাজীবি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী যথাযথ ও তীব্র আন্দোলন কর্মসূচী গ্রহন করবে। তাই শান্তিপূর্ণ সমাধান হিসেবে আপনার যথাযথ পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছি।