শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৯ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

হরতালকে না বলুন: দিলীপ কুমার আগরওয়ালা

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩
  • ৮১ বার পঠিত

হরতালের পর বিএনপি মঙ্গল, বুধ ও বৃহস্পতিবার টানা তিন দিনের অবরোধ পালন করছে। বিএনপি-জামায়াতের হরতালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে আগুন লাগায় পিকেটাররা। আগুন লাগিয়ে পালানোর সময় গণপিটুনিতে পিকেটারদের একজন মারা যান। ডেমরায় পিকেটাররা বাসে আগুন দিলে চালকের সহকারী প্রাণ হারান। লালমনিরহাটে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বগুড়ায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। রাজধানীতে ১৯টি যানবাহন পিকেটারদের আগুন ও ভাঙচুরের শিকার হয়। ২৮ তারিখে সমাবেশের নামে নানামুখী তৎপরতা এবং পরদিন হরতালে পণ্য চলাচলে বিঘ্ন হওয়ায় বেড়ে গেছে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম।
হরতালে বিপুলসংখ্যক মানুষের হতাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পোৎপাদন যেমন ব্যাহত হয়, তেমনি অর্থনীতির চাকাও হয়ে পড়ে স্থবির। গবেষকদের মতে, এক দিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ অন্তত দেড় হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে পোশাক খাতেই ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকার ওপরে। এই আর্থিক ক্ষতির বাইরে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার বিষয়টি যোগ করলে হরতালে ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি। একদিকে হরতাল দেশের জনগোষ্ঠীকে করে তোলে কর্মবিমুখ ও অলস, অন্যদিকে ধ্বংস করে মানবিক মূল্যবোধ। হরতালের কারণে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়, বিদেশি বিনিয়োগকারী ও পর্যটকেরাও মুখ ফিরিয়ে নেয়। বাংলাদেশের বিকাশমান অর্থনীতিকে রক্ষা করতে হলে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হরতালের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশের অর্থনীতিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে তিন চালিকাশক্তি। এগুলো হলো-কৃষি, গার্মেন্টস এবং রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়)। মোট বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে গার্মেন্টস ও রেমিট্যান্স থেকে। আর মোট শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশের বেশি কৃষিতে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির যাত্রা শুরু হয় ১৯৭২ সালে। সে সময়ে অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে ভারত ও পাকিস্তান এগিয়েছিল। আজ ৫০ বছর পর প্রায় প্রতিটি সূচকেই তারা বাংলাদেশ থেকে পিছিয়ে আছে। এটাই আমাদের স্বাধীনতার বড় অর্জন। যেকোনো দেশের উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধরা হয় মানবসম্পদ, যাতে আমরা শুধু পাকিস্তান নয়, অনেক ক্ষেত্রে ভারত থেকেও এগিয়ে আছি। নারীশিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন, মা ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে।
বিশ্বমন্দায় কঠিন সময় মোকাবিলা করছে গুটিকয়েক বাদে বিশ্বের সব দেশ। বাংলাদেশেও এ ধকল অনুভূত হচ্ছে প্রবলভাবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল তলানিতে। অতিযোগ্য ওয়ান-ইলেভেনি শাসনের ক্যারিশমায় অর্থনীতি ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। তারপর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস এগিয়ে যাওয়ার। এমনকি এই মহামন্দাকালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দুনিয়ার সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং সেরা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে যাদের ধরা হয় তাদের চেয়েও ঢের বেশি। বাংলাদেশের জোর কদমে এগিয়ে যাওয়া বিশ্ব মোড়লদের গাত্রদাহ শুরু করেছে। এ দেশকে কীভাবে ঠেকানো যায় তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব মাতবরদের কারসাজি। তবে বাংলাদেশকে যে হারানো যাবে না, সে সত্যটি তুলে ধরা হয়েছে গোল্ডম্যান শ্যাক্সের প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, ২০৭৫ সাল নাগাদ বিশ্বের ১৬তম অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ।
পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৭৫ সালে বাংলাদেশের জিডিপি বেড়ে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ডলার। ১ ট্রিলিয়ন ডলার সমান ১ লাখ কোটি ডলার। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৬ দশমিক ৩ লাখ কোটি ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় জিডিপি হবে ৬৮৬ দশমিক ৭ লাখ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরে সরকারের প্রাক্কলিত জিডিপির চেয়ে ৬৩৬ লাখ কোটি টাকা বেশি। একটি দেশের বর্ধিত জনসংখ্যা, শ্রমশক্তি এবং বিপুল প্রতিভার জন্য প্রশিক্ষণ ও দক্ষতাকে সম্ভাবনা ধরে অর্থনীতির এ পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গোল্ডম্যান শ্যাক্সের জিডিপি আউটলুক ২০৭৫-এ বিকাশমান অর্থনীতির দেশগুলোকে সম্ভাবনাময় বলা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুত এগোচ্ছে। করোনা মহামারির কারণে জিডিপি অর্জন কিছুটা শ্লথ হলেও আবার অর্থনীতি গতি ফিরে পাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারলে ২০৭৫ সালে বাংলাদেশ কাক্সিক্ষত গন্তব্যে পৌঁছতে পারবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি সৌদি আরব, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়াকেও ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব অবাক দৃষ্টিতে দেখবে বাংলাদেশকে।
বৈশ্বিক অস্থিরতার যে প্রভাব দেশের অর্থনীতিতে পড়েছে সেখান থেকে এখনও বাংলাদেশ বের হয়ে আসতে পারেনি। অন্যদিকে বাজারে মূল্যস্ফীতিও রয়েছে উচ্চমাত্রায়। এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে হরতাল দিলে দেশের অর্থনীতিতে ক্ষতির পরিমাণ হবে বিপুল।
এর আগে ২০১১ সালের জুলাই মাসে টানা ৬দিন চলা হরতাল নিয়ে জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএনডিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তখনকার ৬ দিনের হরতালে দেশের ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রতিটি হরতালে জিডিপির গড় ক্ষতি ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। একই প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতালের কারণে দেশের মোট অর্থনীতির ২০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়ে। এছাড়া আমদানি-রফতানিতে এ ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ এবং শুধু একদিনের হরতালের কারণে দেশে পণ্যমূল্যের দাম বাড়ে ১০ শতাংশ। তাই উন্নয়নের অগ্রগতি ধরে রাখতে হরতালকে না বলুন।

লেখক: পরিচালক, এফবিসিসিআই, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com