নিজস্ব প্রতিবেদকঃ ড্রেনেজ সিষ্টেম ও দূর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে উত্তরার নতুন ওয়ার্ড গুলোর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে বেড়েই চলছে জলাবদ্ধতা। বর্ষার আগেই দক্ষিণখান থানার নতুন ৪ টি ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে বাসাবাড়ির ময়লা পানি জমে কালা কুচকুচে হয়ে উঠেছে। সড়কের জলাবদ্ধতা না কমায় এসব ওয়ার্ডের কয়েক লাখ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার।
ডিএনসিসির নতুন ওয়ার্ড গুলোর অন্যতম বড় সমস্যা জলাবদ্ধতা । সামান্য বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় এখানকার রাস্তাঘাট।সরেজমিনে দেখা যায়,দক্ষিণখান আসকোনা আমতলা সড়ক, চালাবন্দ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক, দক্ষিণখান থানা রোড, পূর্ব আজমপুর ভাই ভাই মার্কেট রোড, আর্ক হাসপাতাল রোড, মাটির মসজিদ,আজমপুর কাঁচাবাজার, মোল্লারটেক, জয়নাল মার্কেট, দক্ষিণখান বাজার হইতে উত্তরখান মাজার রোড এসব সড়কে এখনো ২/৩ ফুট পানি জমে আছে। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এভাবে সড়কে জমে থাকা ময়লা পানির দূর্গন্ধে নাকাল পথচারীরা।
এখানকার স্থানীয়রা জানান, ঢাকা -১৮ আসনের নতুন ওয়ার্ডের জলাবদ্ধতা নিরসনে একনেক প্রকল্পের ৪ হাজার ২৫ কোটি টাকা সরকারি বরাদ্দের ছাড় হওয়ার প্রায় ৩ বছর পর ও এলাকার পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না।
স্থানীয়রা বলেন,অপরিকল্পিত খোঁরাখুরির কারণে এখানকার বাসা বাড়ি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ময়লা পানি সুয়ারেজ লাইন দিয়ে নদীতে যেতে পারছে না।এ সব এলাকায় পানির সঙ্গে বিভিন্ন বর্জ্য পলিথিন ও অপচনশীল পদার্থ ড্রেনে আটকে গিয়ে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়,ফলে পাড়া মহল্লায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বর্ষা কালে বৃষ্টির পানি যাতে সহজেই নদীতে চলে যেতে পারে সেদিকে কর্তৃপক্ষকে আরো বেশি নজর দিতে হবে। দক্ষিণখান ভাই ভাই মার্কেট এলাকার বাসিন্দা মোঃ সেলিম বলেন,উক্ত কাজে সংশ্লিষ্টদের পরিকল্পনার অভাবে গত ২/৩ বছর যাবত এখানকার বাসিন্দারা দূর্ভোগে নাকাল।
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে গত সোমবার সারাদিন দেশের অনেক জায়গায় মাঝারী ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে।বৃষ্টিপাতের প্রভাবে উত্তরখান ও দক্ষিণখানের অনেক রাস্তায় ডুবে যায়, ডুবে যাওয়া সে সব সড়কে এখনো পানি জমে থাকায় এখানকার জনজীবন অচল হয়ে পরেছে। ডিএনসিসির ৪৫ নং ওয়ার্ড উত্তরখান মাষ্টারপাড়ার ডাচবাংলা ব্যাংকের সামনের সড়ক,৪৭ নং ওয়ার্ড ট্রান্সমিটার বাইতুর নুর জামে মসজিদ মেইনরোড , দক্ষিণখান পূর্ব আজমপুর সড়ক, মিজানের গ্যারেজ সড়ক ও ৪৮ নং ওয়ার্ড আর্মি সোসাইটি,নগইড়াবাড়ী,হলান,বউরা,দক্ষিণখান গার্লসস্কুল রোড,চেয়ারম্যান বাড়ি রোডসহ আইনুছবাগ এলাকার বাসিন্দারা এখনো পানিতে ঘরবন্দী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৫৩ নং ওয়ার্ড তুরাগ নয়ানগর সড়ক,৫২ নং ওয়ার্ড বাউনিয়া, দলিপাড়া উলু দাহা, নলভোগ,চন্ডালভোগ, রাজাবাড়ী, ডেসকো অফিস সড়কে এখনো পানি জমে একাকার হয়ে আছে। ৫৪ নং ওয়ার্ডের শাখা সড়ক গুলোতে পানি জমে মানুষ ও যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
সরেজমিনে আরো দেখা যায়, দক্ষিণখান ৪৯ নং ওয়ার্ড কাওলা,আসকোনা,সিটি কমপ্লেক্স, তারানটেক, নর্দাপাড়া, ফায়দাবাদ, চালাবন ভাই ভাই মার্কেট মিজানের গ্যারেজ এলাকার সড়ক গুলোতে এখনো হাটুজল রয়েছে। এসব সড়কে পানি জমে এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বেটারীচালিত রিক্সা ও অটোরিকশার উপরে পানি উঠে যায়। ভাংগাচূড়া এসড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করা লেগুনা ও অটোরিক্সা গুলো চলতে চলতে রাস্তায় নষ্ট হয়ে পরে থাকতেও দেখা যায়।
গত কয়েক দিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে দেখা যায়,রাজধানীর দক্ষিণখান থানার নতুন ৪ টি ওয়ার্ড এবং উত্তরখান থানার ৩ টি ওয়ার্ডের স্কুল কলেজ,বাসা বাড়ী ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জমে থাকা পানি নিয়ে ভুক্তভোগীরা অনেকে সমালোচনা করেছেন। এ ঘটনায় এলাকায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানী দক্ষিনখান এলাকার পানি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে বিমানবন্দর থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সোহেল রেজার লেখা পোস্টে অনেকে ইতিবাচক সমালোচনা করেছেন, আবার অনেকে নিতীবাচক সমালোচনা ও করেছেন। এলাকার পানি না সরার কারণ জানতে চাইলে দক্ষিণখান সিটি কমপ্লেক্স এলাকার বাসিন্দা সোহেল রেজা বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল তারানটেক এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করে রেখেছে। এ বাঁধের কারণে দক্ষিণখানের বেশির ভাগ সড়ক এখনো পানিতে ডুবে আছে।এসময় তিনি আরো বলেন,দীর্ঘ কয়েক বছর যাবত কাওলা নামাপাড়া বউড়া গোয়ালিয়া খালে গিয়ে পানি চলে যেতো বালু নদীতে। পানি চলাচলের সেই জায়গাটি বন্ধ করে দেওয়ায় পুরো দক্ষিণখান এলাকাজুড়ে এখন পানিতে সয়লাব। এ বিষয়ে ৪৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম বলেন,রাস্তায় জমে থাকা পানি সরিয়ে এলাকার জনদূর্ভোগ কমাতে সকাল থেকে ঢাকা-১৮ আসনের এমপি মহোদয় এবং সিটি কর্পোরেশনের ইঞ্জিনিয়ারসহ যমুনা হাউজিংএর সাথে কথা বলে পানি সরানোর পরিকল্পনা করেছি । এ সময় তিনি আরো বলেন, আগামী কাল থেকে পানি সরানোর কাজ শুরু হবে।
উত্তরখান দক্ষিণখান এলাকার শাখা সড়ক গুলোতে পানি জমে থাকার কারণে এখানকার বাসিন্দারা বহুমুখী সংকটে দিনাতিপাত করছে। এছাড়াও যানবাহন সংকটে ও চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তারা। পরিবহন যাত্রীদের অভিযোগ বৃষ্টিতে সড়কের পানির সুযোগ নিয়ে উত্তরখান দক্ষিণখান থানা এলাকায় ভাংগা চূড়া রাস্তায় চলাচল করা লেগুনা, রিকশা ও অটোরিক্সাসহ বিভিন্ন সেক্টর এলাকার রিক্সাচালকগণ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। কোথাও কোথাও দ্বীগুন তিন গুন ভাড়া বেড়েছে। ভাড়া বাড়ায় ভোগান্তি ও বেকায়দায় পরেন নিম্নবিত্ত নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ও অফিসগামী সাধারণ মানুষ। সড়কে জমে থাকা বৃষ্টির পানির মধ্যেই প্রতিদিন হাজার হাজার চাকুরীজীবি মানুষ উত্তরার বিভিন্ন অফিস আদালত,বড় বড় শপিংমল, গার্মেন্ট ফেক্টরী ও প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করেন। অটো ভাড়া দুই তিনগুন বেশি নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে এলাকার অটোরিকশা, বেটারীচালিত অটো ও রিকশা চালকগণ বলেন, বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমার কারণে রিকশা চালাতে অনেক কষ্ট হয়।
তাছাড়া পানিতে ডুবে যাওয়া সড়কে অতিরিক্ত পানির কারণে মোটর নষ্ট হয়ে যায়।একবার মোটর নষ্ট হইলে ৪/৫ হাজার টাকা খরচ হয় তাদের। তাছাড়া পানিতে ডুবা সড়কে বেশিক্ষণ গাড়ি চালানো যায় না বিধায় যাত্রীদের কাছে ভাড়া একটু বেশি চাই।তবে আমাদের কষ্ট দেখে অনেকে খুশি হয়ে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। এসময় এলাকার স্থানীয়রা জলাবদ্ধতা নিরসনে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আহবান জানান।