নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনায়ারুল আজিম আনার হত্যার তদন্ত করতে এবার নেপালে গেল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একটি প্রতিনিধি দল। দুই সদস্যের এই কমিটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) হারুন অর রশীদ। শনিবার সকালে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যান তারা।
দলের আরেক সদস্য হলেন ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহিদুর রহমান রিপন, যিনি এমপি আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্তে জড়িত।
ডিবি পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ আজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সকালে ডিবি টিম নেপালের উদ্দেশে দেশ ছেড়েছে।
এর আগে হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে ডিবির তিন সদস্যের একটি দল গত ২৬ মে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে কলকাতায় যায় এবং ৩০ মে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, সন্দেহভাজন আসামিদের একজন সিয়াম হোসেন হত্যাকাণ্ডের পর নেপালে পালিয়ে যান। এমপি আনারকে হত্যার পর মরদেহের খণ্ডাংশ ডাম্পিংয়ে জড়িত ছিলেন তিনি।
ডিবির একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ পুলিশ ইন্টারপোলের কাছে গ্রেফতারের জন্য সহায়তা চাওয়ার পর সিয়ামকে নেপালে আটক করা হয়।
এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার ডিবি প্রধান হারুন গণমাধ্যমকে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আক্তারুজ্জামান (পরিকল্পনাকারী ও মাস্টারমাইন্ড) এ সিয়ামের পাসপোর্ট ও মোবাইল নম্বরসহ বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে ইন্টারপোলকে অবহিত করেছেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি)। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছে ডিবি। এছাড়া আক্তারুজ্জামানকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে আনতে ভারতের সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে।
তবে নেপালে সিয়ামের গ্রেফতার বা আটকের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। সূত্রটি জানায়, সিয়ামকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনতে নেপালে গেছেন ডিবি প্রধান। তবে এ বিষয়ে হারুন অর রশীদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
কলকাতায় বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যার ঘটনায় একটি বিশেষ তদন্ত দল (এসআইটি) গঠন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি। এ দলের নেতৃত্বে ইনস্পেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা থাকবেন বলে সিআইডি সূত্র জানিয়েছে।
তদন্ত দলে তিনজন ডিআইজি ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা থাকবেন।
এমপি আনার হত্যার তদন্তে বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস ভারতের-
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিআইডির এক কর্মকর্তা জানান, সংসদ সদস্য আনারের দেহাবশেষ অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবে। এরইমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির কর্মকর্তারা এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দারা (ডিবি) গ্রেফতার ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন।
ঐ কর্মকর্তা বলেন, খালে আমরা অনুসন্ধান চালাচ্ছি। এমপিকে শেষবার যে ভবনে ঢুকতে দেখা গিয়েছিল সেখানকার স্যুয়ারেজ লাইন থেকে আরো কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আমরা সেগুলো পরীক্ষার জন্য পাঠাচ্ছি।
হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আরো জানতে গ্রেফতার জিহাদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে সিআইডি।
‘ফোন কলের বিবরণ যাচাই করা হচ্ছে মূল ষড়যন্ত্রকারীর নম্বর পাওয়ার জন্য, যে কিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসে আছে। যদি আমরা তার শেষ অবস্থান শনাক্ত করতে পারি, তাহলে অপরাধ সংঘটিত করার পর তিনি কোন পথে পালিয়েছেন, আমরা তা জানতে পারব’, বলেন ঐ কর্মকর্তা।
কলকাতার নিউটাউনের ঐ ফ্ল্যাটে এমপি আনারকে হত্যার পর খুনিরা মরদেহের টুকরো অংশ কোথায় কোথায় ফেলেছে তা জানতে পুরো রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি।
এদিকে এমপি আনার হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে গ্রেফতার ৩ আসামিকে আরো ৫ দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। তারা হলেন- আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, সেলেস্তি রহমান ও তানভীর ভূঁইয়া।
এর আগে, তাদের ৮ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছিলেন আদালত। রিমান্ড শেষে আজ ডিবি তাদের আদালতে হাজির করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিক তাদের নতুন করে ৫ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।