সিটিজেন প্রতিবেদকঃ আজ সোমবার আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। জাতিসংঘ ২০০৩ সালে এই দিনকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে।ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনে (আনকাক) সই করা দেশ হিসেবে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৯১টি দেশে একযোগে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে।
এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য– ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা : গড়বে আগামীর শুদ্ধতা’। ২২তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসটি উপলক্ষ্যে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের বার্তা দিতে চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বরাবরের মতো এবারও রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪টি জেলা এবং ৪৯৫টি উপজেলায় বড় পরিসরে উদযাপন করা হবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। একইসঙ্গে দেশে সব সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ, সরকারি-আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং পিকেএসএফসহ অন্যান্য এনজিওতে দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
যার মধ্যে রয়েছে– সারা দেশে দুর্নীতিবিরোধী কার্টুন প্রদর্শনী, মানববন্ধন, সেমিনার ও আলোচনা সভা। যেখানে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা, সামাজিক সংগঠন, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি ও সাধারণ জনগণ অংশগ্রহণ করবে।
যদিও এবারই প্রথমবারের মতো দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার ছাড়া দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। গত ২৯ অক্টোবর দুদকের চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদত্যাগ করেন। মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত নতুন কমিশন পুনর্গঠন হয়নি। অর্থাৎ কমিশন ছাড়াই দুদক সচিবের নেতৃত্বে আপাতত দুদক দিবসটি উদযাপন করছে।
দুর্নীতিবিরোধী দিবসে প্রতিষ্ঠানটির আয়োজন সম্পর্কে জানা যায়, সোমবার সকাল ৮টায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসটি উদ্বোধন করা হবে। ফেস্টুন-বেলুন উড়ানোর পর দিবসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করা হবে।
এরপর সকাল ১০টায় ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল উপস্থিত থাকবেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও দুদক সংস্কার বিষয়ক কমিশন প্রধান ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান।
দিবসটি উপলক্ষ্যে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দলীয়করণ, আমলাতন্ত্র, অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি, অনিয়ম, অনাচারের কারণে দুদক দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সাঁড়াশি বা শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দুদককে ঢেলে সাজাতে হবে। দুদক সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন সংস্কার কাজও চলছে। এবার বিশেষ পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালিত হচ্ছে। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত নতুন সম্ভাবনার বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দুদকের পাশাপাশি রাষ্ট্র কাঠামো এমনভাবে সংস্কার করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান অব্যাহত রাখবে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির বাইরে সারা দেশে বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দৃশ্যমান ও উন্মুক্ত স্থানে দুর্নীতিবিরোধী বাণী সম্বলিত ব্যানার স্থাপন, জাতীয় পতাকা ও দুদক পতাকা উত্তোলন, ফেস্টুন-বেলুন ওড়ানো, মানববন্ধন, আলোচনা সভা এবং গণযোগাযোগ অধিদপ্তরের জেলা তথ্য অফিসের সহযোগিতায় দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়/ জেলা কার্যালয়/বিভাগীয় জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে জনসমাগম হয় এমন স্থানে দুর্নীতিবিরোধী তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হবে।
জাতিসংঘ ২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস ঘোষণা করে। সে হিসেবে এবার ২২তম আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। জাতিসংঘ সারা বিশ্বকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যেই ইউনাইটেড ন্যাশনস কনভেনশন অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (আনকাক) মাধ্যমে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ আনকাকের সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালন শুরু করে। যদিও সরকারিভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। দুদকের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।