মো: মাসুদ পারভেজ: মুসলিম-গরিষ্ঠ কাশ্মীরের জনসংখ্যাগত চরিত্র বদলে দেওয়াই সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলোপের পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি না, তা নিয়ে এখন তীব্র বিতর্ক দানা বাঁধছে। ভারতে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বা তাদের পুরনো অবতার জনসঙ্ঘ অবশ্য বহু বছর ধরেই ভারতীয় সংবিধানের এই বিতর্কিত ধারাটি বিলোপ করার দাবি জানিয়ে আসছিল।
বিজেপির বক্তব্য ছিল, কাশ্মীর যাতে সম্পূর্ণভাবে ভারতের সাথে সংযুক্ত বা ‘আত্মীকৃত’ হতে পারে সে জন্যই এই ধারাটি বিলোপ করা দরকার। স্বাধীনতার সাত দশক পর ভারতে একটি বিজেপি সরকার অবশেষে তাদের এই বহু পুরনো রাজনৈতিক এজেন্ডাটি বাস্তবায়ন করল।
ভারত সরকারের মনে রাখতে হবে সীমান্তবর্তী রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর এমন একটি প্রদেশ, যার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, রাজনীতি সবই বাকি দেশের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এই রাজ্যের লাদাখে বৌদ্ধ ও মুসলিমরা থাকেন, কাশ্মীরে থাকেন মুসলিম, পন্ডিত ও শিখরা। আর জম্মুতে জনসংখ্যার ষাট শতাংশ হিন্দু, আর বাকি চল্লিশ শতাংশ মুসলিম।
এমন একটি রাজ্যকে এক সূত্রে বেঁধে রেখেছিল সংবিধানের ৩৭০ ধারা। এই ধারায় রাজ্যের সব ভাষা-ধর্ম-সংস্কৃতির মানুষের জন্যই বিশেষ ব্যবস্থা ছিল – যা আজ বিজেপি শেষ করে দিল। আর এর মাধ্যমে কাশ্মীর উপত্যকা বা ভ্যালির ডেমোগ্রাফি বদলে দেওয়া হলো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ পদক্ষেপ আসলে একটি সাংবিধানিক সন্ত্রাসবাদ – যার মাধ্যমে কাশ্মীরের স্বকীয় পরিচিতি বা আইডেন্টিটি ধ্বংস করে ডেমোগ্রাফিক রিইঞ্জিনিয়ারিং-য়ের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এটা ঠিকই যে বিজেপি গত নির্বাচনের আগে পোস্টার দিয়েছিল, ঠিকঠাক ভোট দিলে আপনার ভোট কিন্তু আপনাকে কাশ্মীরে জমির প্লটও এনে দিতে পারে। বস্তুত ৩৭০ ধারা বিলোপের সমর্থনে বিজেপি ঠিক এই যুক্তিটাই দিচ্ছে যে, এতদিনে কাশ্মীর ভারতের আর পাঁচটা রাজ্যের সঙ্গে সমান কাতারে এল, কাশ্মীরের ভারতভুক্তি সম্পূর্ণ হল।
এই সিদ্ধান্তের ফলে কাশ্মীরে বসবাস করার জন্য এই মানুষগুলো এখন ভারতে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে হবে। আর এটা তো ভারতীয় সংবিধানেরও পরিপন্থী। কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্তির মধ্যে দিয়ে ভারত-শাসিত ওই প্রদেশের সোয়া কোটিরও বেশি মানুষ অবশেষে বাকি দেশের সঙ্গে সমানাধিকার পেল এবং একই মূল ধারায় মিশতে পারল বলে বিজেপি দাবি করছে। কিন্তু এই পদক্ষেপের মধ্যে দিয়ে আসলে কাশ্মীরের বিশেষ স্বীকৃতি তুলে নিয়ে উপত্যকার দরজা খুব সচেতনভাবে খুলে দেওয়া হল ভারতের সব বর্ণ-ধর্ম-ভাষার মানুষের জন্য।
ইসরায়েল একদিন যা ফিলিস্তিনি-অধ্যুষিত অঞ্চলে করেছে, চীনও করেছে তিব্বতে – সুন্নি মুসলিম-গরিষ্ঠ কাশ্মীরে ভারতও ঠিক সেই একই ধরনের পদক্ষেপ নিল- যা ইতিহাসে কলঙ্কিত হয়েই থাকবে।