নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন জন্মাষ্টমী ঘিরে এবারই প্রথম রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এবারই প্রথম জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রার পেছনে ট্রাকে সাউন্ড সিস্টেম (স্পিকার) ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
আগামী ২৩ আগস্ট (শুক্রবার) ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন বিকেল ৩টায় পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা শুরু হবে। শেষ হবে বাহাদুর শাহ পার্কে।
পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে আগে থেকেই নিরাপত্তাবলয় তৈরি করেছিল ডিএমপি। তবে জন্মাষ্টমীতে এবার নজিরবিহীন নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে ডিএমপি। পুলিশ বলছে, শোভাযাত্রা উদযাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের হামলার হুমকি নেই।
ডিএমপি জানায়, জন্মাষ্টমীর শোভাযাত্রা চলাকালীন পুরান ঢাকার প্রতিটি রাস্তার পাশের ভবনের ছাদে অবস্থান করবে পুলিশ সদস্য। বিভিন্ন স্থান থেকে শোভাযাত্রায় আগত ট্রাক ও পিকআপকে বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দল দিয়ে সুইপিং করা হবে। এছাড়া আয়োজক কমিটিকে নিজেদের পরিচয়পত্র সম্বলিত পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করতে বলা হয়েছে। তারা বাইরে থেকে আগত অবাঞ্ছিত কাউকে শোভাযাত্রায় প্রবেশ করতে দেবে না।
বুধবার (২১ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় ডিএমপি জানায়, শোভাযাত্রায় প্রারম্ভিক অবস্থা থেকে মিলিত হতে হবে। কোনোক্রমেই মাঝপথে কোনো ব্যক্তি শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। নিরাপত্তার স্বার্থে শোভাযাত্রায় হ্যান্ডব্যাগ, ট্রলি ব্যাগ, বড় ভ্যানিটি ব্যাগ, পোটলা, দাহ্য পদার্থ, ছুরি, অস্ত্র, কাঁচি, ক্ষতিকারক তরল, ব্লেড, দেয়াশলাই, গ্যাসলাইট ইত্যাদি সঙ্গে নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে পারবে না। এছাড়া শোভাযাত্রা চলাকালীন রুটে কোনো ধরনের ফলমূল ছোড়া যাবে না।
এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) সোহেল রানা সিটিজেন নিউজকে বলেন, ২৩ আগস্ট (শুক্রবার) উৎসবমুখর পরিবেশে সারা দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা পালনে পুলিশ বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের পাশাপাশি সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি।
এ উৎসব উদযাপনে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জন্মাষ্টমী উদযাপনকে কেন্দ্র করে সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি নেই। তবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পুলিশ সব সময় প্রস্তুত থাকবে।
গত সোমবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ কয়েকটি পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। বৈঠকে পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুৎ, ওয়াসা, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদফতর, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, এসবি, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রায় ব্যাগ, পোটলা ও সাউন্ড সিস্টেম নিয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির কথা বলা হয়।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শোভাযাত্রার নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে, রুফটপ (বাড়ির ছাদে) ডিউটি জোরদার করা হবে।
শোভাযাত্রাটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে পলাশী মোড়-জগন্নাথ হল-কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার-দোয়েল চত্বর-হাইকোর্ট বটতলা-সরকারি কর্মচারী হাসপাতাল-ফিনিক্স রোড (পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সমানে)-গোলাপশাহ মাজার-বঙ্গবন্ধু স্কয়ার-গুলিস্তান (সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে)-নবাবপুর রোড-রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ্ পার্ক পর্যন্ত যাবে। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত আগত যানবাহনগুলোকে এসব সড়ক পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছে ডিএমপি।