শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ::
সিটিজেন নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের জন্য প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে। যারা আগ্রহী আমাদের ই-মেইলে সিভি পাঠান

ইলিশে সয়লাব চাঁদপুরের মাছ বাজার

  • আপডেট টাইম : শুক্রবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৯
  • ২২৭ বার পঠিত

চাঁদপুর জেলা শহরে ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে দেখা যাচ্ছে ইলিশের প্রচুর আমদানি। আর দামও নাগালের মধ্যে ।

বড় রেল ষ্টেশন মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর ইলিশ মাছ আসছে দক্ষিণাঞ্চল থেকে। লোকজনের রয়েছে প্রচুর হাক ডাক। দৈনিক শত শত মণ ইলিশ মাছ আসছে এ ঘাটে । অল্প কিছু চিংড়ি ছাড়া অন্যকোন মাছ নেই এখানে।

প্রবীণ ইলিশ ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম (৫৮) জানান, ঈদের পর থেকেই এখানে ইলিশের আমদানি বেড়েছে। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো থাকায় সহজেই মাছ আসছে এখানে। এখন পুরো মাছঘাট কর্মচঞ্চল। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মাছ ঘাট থাকে ব্যস্ত ।

তবে তারা কিছুটা ক্ষোভের সাথে জানান, এখনও চাঁদপুরের পদ্মা -মেঘনার ইলিশ ১০% ও পাওয়া যাচ্ছে না। অথচ পদ্মার ইলিশের স্বাদই আলাদা। দামও তাই বেশি। এক কেজি ওজনের পদ্মার একটি ইলিশ কেজি ৯০০ টাকা। পক্ষান্তরে একই ওজনের হাতিয়ার সমুদ্রের ইলিশ ৭০০ টাকা। দুই কেজি ও আড়াই কেজি ওজনের ইলিশও পাওয়া যাচ্ছে। এসব ইলিশ ২০০০-২১০০ টাকা প্রতি কেজি দরে এ ঘাটে বিক্রি হচ্ছে ।

চাঁদপুর পাওয়ার হাউজের প্রকৈৗশলী তোসাদ্দেক হোসেন জানান, তিনি দুই কেজি ওজনের ইলিশ কিনেছেন ২১০০ টাকা কেজি দরে ।

ইলিশমাছের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় ঘাটে ইলিশ-ফকিরের আনাগোনাও বেড়েছে। বাতিল হওয়া ইলিশ মাছ গরীব দুস্থরা ও পুরাণবাজারের বউবাজারের মহিলা ব্যবসায়ীদের স্বামীরা কিনে নেন ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বেশির ভাগ ইলিশ আসে হাতিয়া, সন্দীপ,ঢালচর, বরগুনা, নিঝুমদ্বীপ, চরফ্যাশন, পাথরঘাটা ও ভোলা থেকে। মাঝারি সাইজের ইলিশ প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা। ।

আমদানি হওয়া বেশিরভাগ ইলিশ আসে হাতিয়া তার আশপাশের সমুদ্র এলাকা থেকে। হাতিয়া থেকে ট্রাকে বা পিকআপে চাঁদপুর আসতে সময় লাগে ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘন্টা। এতে খরচও কম, ঝামেলাও কম বলে জানান ড্রাইভার এনামুল হক ও তার সহযোগী রফিক ।

চাঁদপুরের বাহিরে ট্রাকযোগে সরাসরি সিলেট, হবিগঞ্জ,শ্রীমংগল, ঢাকার কাওরান বাজারে, নিউমার্কেটে, আবদুল্লাহপুর, আজমপুর, বাইপাইল, টংগী, গাজীপুর, টাংগাইল, কিশোরগঞ্জ, জামালপুর, ময়মনসিংহ,-এ মাছ সরবরাহ করা হয়।

ইলিশের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এঘাটে প্রায় ৮/৯শ দিনমজুর খুব ব্যস্ত । দিনমজুর সিরাজ, ফারুক ও সালাম জানান, ‘অহন কথা বলার সময় নাই ভাই । সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাম করি’ ।

জেলা শহরের নতুন বাজার, পুরাণবাজার, পাল বাজার, বিপনীবাগ, ওয়ারলেস বাজার, আনন্দ বাজার, বাবুরহাট বাজার ও মতলবের বিভিন্ন হাট বাজারে, হাজীগঞ্জ সদরে, ওয়ারুক বাজার, শাহরাস্তির সুচিপাড়া, বেরনাইয়া বাজারে, মেহার কালিবাড়ি এলাকায়, ফরিদগঞ্জের বিভিন্ন বাজারেও বরফে-ঢাকা ছোট, বড়, ও মাঝারি সাইজের প্রচুর ইলিশের আমদানি দেখা যায় ।

বড় রেলওয়ে স্টেশনের হোটেলগুলোর আশপাশ দিয়ে হাঁটলেও এসুস্বাদু টাটকা ইলিশের ঘ্রান নাকে-মুখে আসে । আর সেজন্যই চাঁদপুরকে ’ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ নাম দেওয়া হয়েছে। যেকোন ভ্রমণকারি পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় নদীর প্রচন্ড ঘুর্ণিস্রোত দেখতে আসলে তাকে এখানকার রেস্তোরাঁয় ইলিশের বিভিন্ন রেসিপি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটির সভায় এ কথা জানান তৎকালিন জেলা প্রশাসক আ: সবুর মন্ডল।

তিনি বলেন, চাঁদপুর জেলা ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে ‘চাঁদপুর সিটি অব হিলশা’র যে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাতে ‘ইলিশের শহর চাঁদপুর’ না করে চাঁদপুরের কৃতিসন্তান চিত্রশিল্পী হাশেম খান ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ রাখার পরামর্শ দেন। এ নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিগোচরে আনলে তিনিও ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’কেই সরকারিভাবে অনুমোদন দেন। সে কারণে বর্তমানে চাঁদপুরের সর্বত্র ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ লোগো ব্যবহার শুরু হয়েছে। জেলা শহরের মোহনা এলাকায় পর্য়টন কেন্দ্রের চত্বরে ইলিশের একটি প্রতিকৃতিও স্থাপন করা হয়েছে যা আগন্তুক সবাইকে মুগ্ধ করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved  2019 CitizenNews24
Theme Developed BY ThemesBazar.Com