নিজস্ব প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গণপরিবহনে মাসিক বেতনের ভিত্তিতে চালক নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একটি কোম্পানির অধীনে এসব চালকদের নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীব হাসানের ক্ষতিপূরণ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রিপ ও দৈনিক ভিত্তিতে চালক নিয়োগ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দিয়েছেন। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রায় প্রকাশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রায়ে বলা হয়, বাস কোম্পানি ও চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা দূর করতে বিদ্যমান সকল বাস কোম্পানিগুলোকে একটি কোম্পানির অধীনে আনতে হবে। সকল মহানগরে জোন বা লাইন ভিত্তিক বাস রুট ফ্র্যাঞ্চাইজ করতে হবে। যেখানে সমস্ত গাড়িকে একটি কোম্পানির অধীনে নিয়ে একেকটি রুটের জন্য ভিন্ন ভিন্ন রঙের বাস সার্ভিস চালু করবে।
এছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার সময় চালকদের দৃষ্টিশক্তি ও ডোপ টেস্ট করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা করবে বিআরটিএ। মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কের প্রতিটি ক্রসিংয়ে ও বাস স্টপেজে চালকরা বেপরোয়াভাবে গণপরিবহন চালাচ্ছে কি-না তা নজরদারি করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।
যাত্রীদের জন্য যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করতে হবে। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বিবাদীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রায়ে আরও বলা হয়, বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের দুটি বাসের চালকের বেপরোয়ার কারণেই ওই দুর্ঘটনা ঘটে। হালকা যানচালনার লাইসেন্স থাকার পরও তারা ভারি যান চালাচ্ছিল। তাদেরকে এ ভারি যান চালনার অনুমতি দিয়েছিল বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ফলে ওই দুর্ঘটনার দায় কোনোভাবেই দুটি পরিবহন কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।
এ জন্য রাজীবের দুই ভাই মেহেদী হাসান বাপ্পী ও আব্দুল্লাহ হৃদয়কে ওই দুটি বাস কর্তৃপক্ষ দুই মাসের মধ্যে ২৫ লাখ টাকা করে ৫০ লাখ টাকা প্রদান করবে।
রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, স্বজন পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের সকল পরিচালক যৌথ ও এককভাবে ওই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
গত বছরের ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারার মোড়ে বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনের রেষারেষিতে শরীর থেকে হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজীবের। এ সময় মাথাতেও আঘাত পান তিনি। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ এপ্রিল মারা যান রাজীব।
ওই ঘটনায় হাইকোর্টে কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল। ওই রিটের ওপর গত ২০ জুন রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।