ক্রীড়া প্রতিবেদক,সিটিজেন নিউজ: বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন খোদ বাফুফেরই এক সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ।সোমবার বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিনকে লিখিতভাবেই এই অভিযোগের কথা জানিয়েছেন সংস্থাটির অন্যতম এ কর্তা।
বাফুফের নির্বাহী কমিটির সভায় তিন বছরের আর্থিক বিবরণী অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করার পর তার ওপর সবার মতামত চাওয়া হয়েছিল। সেই মতামত পর্যবেক্ষণ আকারে প্রেরণ করেছেন মহিউদ্দিন আহমেদ, যেখানে ব্যাপক অনিয়মের কথা উল্লেখ করে তার তদন্ত দাবি করেছেন।
মহিউদ্দিন আহমেদ যে অনিয়মগুলোর কথা তুলে ধরেছেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বিগত তিন বছরের (২০১৬, ২০১৭ ও ২০১৮) আর্থিক প্রতিবেদনে ৮ কোটি ৬১ লাখ, ২০১৭ সালে ৫ কোটি ৬৫ লাখ এবং ২০১৮ সালে ২ কোটি ৭৬ লাখ সর্বমোট ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ের অনিয়ম রয়েছে।
পুরো টাকাই ২০০৯ থেকে শুরু করে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যয় খাতের। এগুলো কোনোভাবেই সর্বশেষ তিন বছরের ব্যয় হিসেবে পরিগণিত হতে পারে না। এত পুরনো বড় ব্যয় নতুন করে আর্থিক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা অবৈধ।
তিনটি আর্থিক প্রতিবেদন তিনটি ভিন্ন অডিট ফার্ম দিয়ে করা হয়েছে। যার দুটি বাফুফের সাধারণ সভায় অনুমোদিত নয়। সাধারণ সভায় অনুমোদন না থাকলে সেই অডিট ফার্ম দিয়ে অডিট করানো অবৈধ।
২০১৭ সালের আর্থিক প্রতিবেদনে এশিয়া কাপ, বঙ্গবন্ধু কাপ, জাতীয় স্কুল ফুটবল, এবং প্রতিভা অন্বেষণ কর্মসূচিতে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা সমন্বয় করা হয়েছে। অগ্রীম সমন্বয়ের বিপরীতে কেন অর্থ ব্যয় বেশি হয়েছিল, তার কোনো ব্যাখা নেই।
আইএফআইসি ব্যাংক মতিঝিল শাখায় বাফুফের ৮ কোটি ১০ লাখ টাকা লোন রয়েছে। এ লোন বাফুফে কত কাল বহন করবে এবং বাফুফের অবস্থান কি হবে, তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন মহিউদ্দিন আহমেদ।
মহিউদ্দিন আহমেদ যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, সেগুলো বিগত সভার সিদ্ধান্ত হিসেবে লিপিবদ্ধ করে বাফুফের পরবর্তী কার্যনির্বাহী কমিটির অন্তর্ভুক্তির অনুরোধও করেছেন তিনি।
বাফুফে সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেয়ার বিষয়ে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘২০১৫ সালে এজিএমে কাউন্সিলরদের একটা দাবি ছিল প্রতি বছরের জন্য একটা বাজেট নির্ধারণ করে তার ব্যয় করতে হবে। সেটা করা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে টাকা খরচ করা হয়েছে, দেখানো হয়েছে তার চেয়ে বেশি। ধরুন ৩ লাখ টাকা হয়তো খরচ হয়েছে, কিন্তু দেখানো হয়েছে ১২ লাখ টাকা। কিছু খরচ সাদা কাগজের ভাউচারে করা হয়েছে। সাদা কাগজে কোন ভাউচার গ্রহণযোগ্য নয়।’
মহিউদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘২০১৬ সালের অডিট রিপোর্ট কীভাবে ফিফা-এএফসির কাছে পাঠানো হয়েছে। অথচ সেটা নির্বাহী কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়নি। এজিএম তো দূরের কথা। ২০১৭ সালের বাফুফের অডিট রিপোর্টও নির্বাহী কমিটিতে পাঠানো হয়নি। ২০১৮ সালের রিপোর্ট তড়িঘড়ি করে করার চেষ্টা করা হয়েছে। সেটা বাদ দিয়েই ফিফার কাছে পাঠানো হয়েছে। যেটা সম্পূর্ণ অনৈতিক, অবৈধ।’
এজন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে মহিউদ্দিন বলেন, ‘প্রয়োজনে আমরা এ অসংলগ্নতা ফিফা ও এএফসির কাছেও তুলে ধরবো। প্রয়োজনের আমাদের ক্রীড়াবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর কাছেও যাবো। ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্ব আপনাকে দেয়া হয়েছে। আপনি যদি এই আমানতের খেয়ানত করেন, তবে দেশের ফুটবল কতটা এগুবে তা নিয়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে শঙ্কা প্রকাশ করছি। সন্দেহের উদ্রেগ হতেই পারে। আমরা প্রথমে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো। প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। আমার অবজারভেশনটা লিপিবদ্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে পরবর্তী নির্বাহী সভায় এজেন্ডা আকারে পুনঃউপস্থাপন করতে হবে।’