জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ে পুলিশ সদস্যদের ‘ছাড় দেয়ায়’ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নুসরাত হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আদালত আমলে নেয়া হয়নি বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, ‘এখানেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, যেহেতু পুলিশের ওপর এ সরকার নির্ভরশীল। সে জন্য তারা (সরকার) তাদের এসব কাজ থেকে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। মোট কথা যেটা সেটা হচ্ছে যে, এ সরকার তো নির্বাচিত সরকার নয়, তাদের কোনো ম্যান্ডেট নেই। তারা জোর করে ক্ষমতায় আছে, জোর করে থাকার জন্যই তারা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়ন করছে।’
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুঁড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির সবাইকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমকে নিয়ে দেশে ফেরার পর তিনি এসব কথা বলেন। গত ৩ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য সহধর্মীণীকে নিয়ে সিঙ্গাপুর যান মির্জা ফখরুল। চিকিৎসা শেষে সিঙ্গাপুর থেকে অস্ট্রেলিয়া যান বিএনপি মহাসচিব। সেখানে তিনি এশিয়া প্যাসিফিক ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (এপিডিইউ) বৈঠকে যোগ দেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সংস্থার ভাইস চেয়ারম্যান।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমি গিয়েছিলাম সিঙ্গাপুরে, আমার চিকিৎসার কিছু ফলোআপ ছিল। ওখানে দুদিন থাকার পর আমি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছি। আপনারা সবাই জানেন, সেখানে আমার বড় মেয়ে (সামারুহ মির্জা) থাকে। আমি দলের কাছ থেকে ছুটি নিয়েছিলাম যে কিছু দিন একটু ওদের সঙ্গে কাটাব।
তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ায় আমার এশিয়া প্যাসিফিক ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের একটা কনফারেন্স ছিল। অস্ট্রেলিয়ার যে রুলিং পার্টি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি তারা আমাকে দাওয়াত করেছিল তাদের ফেডারেল কনফারেন্সে। এটা শেষ করে আমি আজ (বৃহস্পতিবার) দেশে ফিরছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে যখন সংবাদের ঘনঘটা ওই সময়টা আমি মিস করেছি। তবে আমি ট্র্যাকে ছিলাম, খোঁজ-খবর রেখেছি, অবজারভ করেছি। বুয়েটের আবরার ফাহাদ হত্যার যে ঘটনা এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক, এটা ক্ষমাহীন একটা অপরাধ।
তিনি বলেন, এ অপরাধের পেছনে আমি সম্পূর্ণভাবে সরকারকে দায়ী করব এ জন্য যে, সরকারের রুলিং পার্টি আছে তাদের প্রশ্রয়ে এ সব এলিমেন্টসরা আজকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। ছাত্রলীগ বা যুবলীগ কয়েক বছর ধরে একেবারেই লাগামহীন হয়ে পড়েছে, গোটা দেশে তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, যে বিষয়টা নিয়ে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে এটা কোনো মতেই কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। একজন সাধারণ নাগরিক ছাত্র যে, তার দেশের স্বার্থ সম্পর্কে একটা মতামত দিতে পারবেন না এটা কখনো চিন্তা করা যায় না। আমরা মনে করি, ভারতে যে প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি যে চুক্তিগুলো করেছেন, যেসব এমওইউ সেই করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। শুধু তাই নয়, বলা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের স্বার্থ বিঘ্নিতও হয়েছে।
সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, এ সরকার একটার পর একটা সমস্যা তৈরি করেছে এর প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা তো নির্বাচিত হয়ে আসেনি। নির্বাচিত হয়ে এলে যে ধরনের দায়িত্বশীলতা সেই দায়িত্বশীলতা থাকতো। এখানে সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ হচ্ছে। আমি মনে করি যে, সরকারের উচিত হবে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের মাধ্যমে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নতুন নির্বাচন করে এ সঙ্কটের সমাধান করা যেতে পারে।
৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের বক্তব্য ‘নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি’ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মেনন ভাইকে ধন্যবাদ দেই যে, এতদিন পরে তিনি সত্য কথা বললেন। এরপর সরকারের উচিত অবিলম্বে পদত্যাগ করা।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের পরিচালিত শুদ্ধি অভিযানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, এ শুদ্ধি অভিযান সম্পূর্ণভাবে আইওয়াশ বলে আমি মনে করি।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মহাসচিবকে বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদ, এসএম জাহাঙ্গীর, শায়রুল কবির খান, মো. ইউনুস আলী, তরুণ দে প্রমুখ নেতা অভ্যর্থনা জানান।